মঙ্গলবার   ১৮ নভেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ৩ ১৪৩২   ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

শেখ রাসেলকে হারিয়ে স্বাধীনতা কাপ চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংস

নিউজ ডেস্ক

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০১:৩৫ এএম, ২৭ ডিসেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার

ঢাকার ক্লাব ফুটবলের শীর্ষ আসরে অভিষেকেই ট্রফি জয়ের সম্ভাবনা জাগিয়েছিল নবাগত বসুন্ধরা কিংস; কিন্তু জনপ্রিয় ক্লাব ঢাকা আবাহনী লিমিটেডের কাছে ফেডারেশনকাপের ঘটনাবহূল ফাইনালে ৩-১ গোলে হেরে শেষ অবধি রানার্সআপ হয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়।

কিন্তু মৌসুমের দ্বিতীয় আসর, তথা স্বাধীনতা কাপেই ঘুচলো শুরুতে ট্রফি জিততে না পারার আক্ষেপ। আজ বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে ফাইনালে প্রতিষ্ঠিত শক্তি শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রকে ২-১ গোলে হারিয়ে স্বাধীনতা কাপের শিরোপা জিতলো বসুন্ধরা কিংস।

৯০ মিনিটের জমজমাট ফাইনাল ১-১ গোলে অমিমাংসিত থাকার পর অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় খেলা। অতিরিক্ত সময়ের পঞ্চম মিনিটে বদলি ফরোয়ার্ড মতিন মিয়ার দারুণ এক গোলে জয়ের দেখা পায় বসুন্ধরা কিংস।

এবারই প্রথম ঢাকার ক্লাব ফুটবলের শীর্ষ পর্যায়ে উঠে আসা বসুন্ধরা বছরের প্রথম আসরে মাঠে নেমেই শিরোপার গন্ধ পাচ্ছিলো; কিন্তু গোলযোগপূর্ণ ও হাতাহাতির ফেডারেশন কাপ ফাইনাল আবাহনীর সাথে পেরে ওঠা সম্ভব হয়নি তাদের। ওই ফাইনালে বল ছেড়ে মারামারিতে লিপ্ত হওয়া ফাইনালে বসুন্ধরার সুশান্ত ত্রিপুরা আর তৌহিদুল আলম সবুজ লাল কার্ড পেয়ে বহিষ্কৃত হয়েছিলেন। পরবর্তীতে তাদের দু’জনার ওপর শাস্তির খড়গও নেমে আসে। সুশান্ত ত্রিপুরাকে প্রথমে আট ম্যাচ আর পরে ছয় ম্যাচ সাসপেন্ড করা হয়। একই ভাবে তৌাহিদুল আলম সবুজকেও প্রথমে ছয়, পরে পাঁচ ম্যাচ নিষিদ্ধ করা হয়।

নির্ভরযোগ্য ওই দুই পারফরমারকে ছাড়াই স্বাধীনতা কাপ খেলতে নেমে সেমির যুদ্ধে আবাহনীকে টাইব্রেকারে হারিয়ে ফাইনালে উঠে আসে বসুন্ধরা।

বুধবার যাদের হারিয়ে বসুন্ধরা কিংস জিতলো নিজেরে প্রথম ট্রফি, সেই শেখ রাসেলের সাথে এই স্বাধীনতা কাপের গ্রুপ পর্বে দেখা হয়েছিল বসুন্ধরার। ওই ম্যাচ গোলশূন্য ড্র হলেও আজ ফাইনালে শেষ হাসি স্পেনিশ কোচ অস্কার ব্রুজনের শিষ্যদের।

অন্যদিকে ২০১২-১৩ মৌসুমে স্বাধীনতা কাপ, ফেডারেশন কাপ ও লিগ মিলে ট্রেবল বিজয়ী শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্র দীর্ঘ পাঁচ বছর পর এই প্রথম কোন টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠে আসে।

সাইফুল বারী টিটুর কোচিংয়ে আজকের ফাইনালে তাদের বল নিয়ন্ত্রণ ছিল একচেটিয়া। গোলের সুযোগ সৃষ্টিতেও বসুন্ধরার চেয়ে অনেক এগিয়ে ছিল শেখ রাসেল; কিন্তু গোলের খেলা ফুটবলে গোলই যেখানে শেষ কথা, সেখানে প্রাপ্ত সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে না পারার অর্থ, ম্যাচ হারা। শেখ রাসেলও হেরেছে দক্ষ গোলদাতার অভাবে।

পুরো খেলায় গোলের সু-স্পষ্ট সুযোগ সৃষ্টিতে বসুন্ধরার চেয়ে ঢের এগিয়ে থেকেও ফিনিশিংয়ে গিয়ে মার খেয়েছে শেখ রাসেল। অন্যদিকে বসুন্ধরা সে অর্থে গোল করার সুযোগই পায়নি। ১৭ মিনিটে প্রায় ধারার বিপরিতে এগিয়ে গেছে ব্রাজিলিয়ান মার্কোস ভিনিসিয়াস বাঁ-পায়ের জাদুকরি শটে। আর অতিরিক্ত সময়ের পঞ্চম মিনিটে জয়সূচক গোলটিও সে অর্থে কোন সু-পরিকল্পিত আক্রমণ থেকে আসেনি। ওটা বদলি ফরোয়ার্ড মতিন মিয়ার একার কৃতিত্ব।

তারপরও বসুন্ধরা কিংস কৃতিত্বের দাবিদার, ঢাকার ফুটবলের প্রতিষ্ঠিত শক্তিদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে কাগজে-কলমে ভাল দল সাজানোর পুরষ্কারটা ঠিক দ্বিতীয় আসরেই পেল বসুন্ধরা কিংস। প্রথমবার মাঠে নেমে ফেডারেশন কাপ রানার্সআপ, আর দ্বিতীয় আসর স্বাধীনতা কাপ চ্যাম্পিয়ন।

এর আগে খেলার ১৭ মিনিটে ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড মার্কোস ভিনিসিয়াস এগিয়ে দিয়েছিলেন বসুন্ধরা কিংসকে। প্রথমার্ধের ৪৫ মিনিট শেষে ইনজুরি টাইমের প্রথম মিনিটে শেখ রাসেলকে খেলায় সমতা ফিরিয়ে এনেছিলেন দলটির নাইজেরিয়ান ফরোয়ার্ড রাফায়েল ওডোইন।

দ্বিতীয়ার্ধের বেশীর ভাগ সময় খেলা মাঝ মাঠেই সীমাবদ্ধ থাকে। সে অর্থে ইতিবাচক ম্যুভ হয়নি। তারপরও এগিয়ে যাবার হাতে গোনা যে দুটি সম্ভাবনা তৈরী করেছিল শেখ রাসেল। ৬৭ মিনিটে রাফায়েল ওডোইনের শট ডিফেন্ডার নাসিরউদ্দীন রুখে দেন।

৭৬ মিনিটে ব্রাজিলিয়ান রাফায়েল ডি সিলভার ক্রসে রাফায়েল পা ছোঁয়াতে পারেননি। অতিরিক্ত সময়ের পঞ্চম (খেলার ৯৫ মিনিটে) মিনিটে আবার এগিয়ে যায় বসুন্ধরা কিংস।

গোলদাতা বদলি হিসেবে নামা লেফট উইং মতিন মিয়া। দ্বিতীয়ার্ধের মাঝামাঝি সময়ে সাদ্দাম হোসেন অ্যানির বদলে মাঠে নেমে একটি বিক্ষিপ্ত আক্রমণ থেকে অসামান্য দক্ষতায় গোল করে বসুন্ধরাকে এগিয়ে দেন মতিন মিয়া।

বসুন্ধরার রাইট ব্যাক যেখানে দাঁড়ায়, বাঁ-দিক ঘেঁষে ঠিক সেখানেই বল পান বসুন্ধরার মতিন মিয়া। তার মার্কার পিপলু খুব কাছেই ছিলেন। মতিন মিয়া বল নিয়ন্ত্রণে নেয়ার সময় পিছলে পড়ে যান পিপলু। তাতেই মতিন মিয়ার পায়ে বল চলে যায়। এরপরও সেখান থেকে গোল করা খুবই কঠিন ছিল।

কারণ মতিন মিয়া ছিলেন দূরহ কোণে। ছোট বক্সের ঠিক বাইরে প্রথম পোস্টের প্রায় সমান্তরালে দাঁড়ানো মতিন মিয়ার পক্ষে সেখান থেকে গোল করা সহজ ছিল না। দু’জন ডিফেন্ডার ছিলেন সামনে। আর গোলকিপার রানা প্রথম পোস্ট কভার করেই রেখেছিলেন।

এত অল্প জায়গায় দুই শেখ রাসেল ডিফেন্ডারকে কাটানো বা শরীরে ঝাঁকুনিতে পিছনে ফেলা বেশ কঠিন কাজই ছিল; কিন্তু বুদ্ধিমান মতিন মিয়া তাৎক্ষণিক বুদ্ধি খাটিয়ে আর কাউকে কাটানোর চেষ্টা না করে বলকে ডান পা দিয়ে দূরের পোষ্ট লক্ষ্য করে বাতাসে ভাসিয়ে দেন। সেই বল বাঁক খেয়ে দ্বিতীয় পোস্ট ঘেঁষে জালে জড়িয়ে যায়।

শেখ রাসেল গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানা অসহায়ের মত তাকিয়ে তাকিয়ে দেখেন মতিন মিয়ার বাঁকানো শট তার নাগালের বাইরে দিয়ে জালে পৌছে গেল। শেষ পর্যন্ত সেটাই জয়সূচক গোল হয়ে থাকলো। ওই গোলেই ঢাকাই ফুটবলের শীর্ষ পর্যায়ে প্রথ ট্রফি পেল বসুন্ধরা।

দেখা যাক আসল পেশাদার লিগে কি করে বসুন্ধরা কিংস? এই সাফল্যের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারে কি না!