মরগানের বিশ্বরেকর্ডে চাপা পড়লো আফগানিস্তান
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১০:১৩ এএম, ১৯ জুন ২০১৯ বুধবার

রশিদ খান বোধহয় আজ রাতে ঘুমাতে পারবেন না। সবাই করে ব্যাট দিয়ে সেঞ্চুরি আর তিনি বিশ্বকাপে বল হাতে সেঞ্চুরি করে ফেললেন তাও মাত্র ৯ ওভার বল করে। ইংলিশ ব্যাটসম্যানদের দয়ামায়াহীন ব্যাটিংয়ের কাছে রশিদ খানের গুগলি, কুইকার, লেগ স্পিন সব যেন সরলরেখার মত সোজা মনে হচ্ছিল।
১১০ রান দিয়ে রশিদ খান এখন বিশ্বকাপ ইতিহাসের সবচেয়ে খরচে বোলারদের তালিকায় সবার উপরে। আর তিনটি রান দিলেই তিনি হয়ে যেতেন ওয়ানডে ইতিহাসের সবচেয়ে খরচে রান দেয়ার বোলার। আফসোস, গুলবাদাইন নাইব তার সতীর্থকে সেই লজ্জার হাত থেকে বাঁচাতে আর এক ওভার দেননি।
অনেক স্বপ্ন নিয়ে বিশ্বকাপ বাছাই উৎরে মূল পর্বে খেলার সুযোগ করে নিয়েছিল আফগানিস্তান। তাদের জন্য বিশ্বকাপের একটি ম্যাচ জয়ই অনেক কিছু। কিন্তু আফগানদের সেই আশায় গুড়েবালি। বিশ্বকাপে পাঁচটি ম্যাচ খেলে সবগুলোতেই হারের মুখ দেখতে হয়েছে গুলবাদাইন নাইবের দলকে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে এসে তো ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা হয়েছে আফগানিস্তানের। এক ইয়ন মরগানের বিশ্বরেকর্ডের দিনে রশিদ খানদের তুলোধুনো করা হয়েছে বলের পর বল। বিশ্বকাপ ইতিহাসে ইংলিশদের সর্বোচ্চ দলীয় রানের দিনে ইয়ন মরগান খেলেছেন ৭১ বলে ১৪৮ রানের ইনিংস। অথচ কে বলবে এই মরগানেরই আগের ম্যাচে ইনজুরি ছিল!
টস জিতে কোনরকম দ্বিধা ছাড়াই ব্যাটিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন ইংলিশ অধিনায়ক। নিয়মিত ওপেনার জেসন রয় ইনজুরির কারণে ১০ দিন মাঠের বাইরে থাকায় কপাল খুলে এদিন জেমন্স ভিন্সের। জনি বেয়ারস্টোর সঙ্গে শুরুতে নামেন তিনি। উদ্বোধনী জুটিতে ৪৬ রান তুলে দাওলাত জাদরানের বলে আউট হন ভিন্স। দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে যেন মারমুখী হয়ে ওঠেন আগের ম্যাচের সেঞ্চুরিয়ান জো রুট ও ওপেনার জনি বেয়ারস্টো।
শুরুতে বেয়ারস্টো কিছুটা স্লো খেলতে থাকেন। আগের সেই ফর্ম ফিরে পাওয়ার জন্য ধীরে ধীরে এগুতে থাকেন তিনি। ৬১ বলে নিজের অর্ধশতক পূরণ করেন। অর্ধশতক পূরণ করে মারমুখী হয়ে ওঠেন বেয়ারস্টো। পরবর্তী ৩৮ বলে করেন ৪০ রান। যখন তাকে সেঞ্চুরি চোখ রাঙানি দিচ্ছিল তখনই ৯০ রানে তাকে আউট করেন অধিনায়ক গুলবাদাইন নাইব। ৩টি ছক্কা ও ৮টি চার হাঁকান তিনি।
জো রুত তখন ৪৮ রান নিয়ে ব্যাট করছেন এমন সময় ক্রিজে আসেন ইয়ন মরগান। ৩০ ওভারে ১৬৪ রান থাকা অবস্থায় এসে পুরো ম্যাচের দৃশ্যপটটাই নিজের দিকে নিয়ে নেয় মরগান। অনেকেই ভেবেছিল আগের ম্যাচে ইনজুরি ছিল তাই এই ম্যাচে একটু রয়ে সয়ে খেলবেন তিনি। কিন্তু কীসের কী! আফগান বোলারদের তুলোধুনো করতে থাকেন মরগান। অপরপাশে ৫৪ বলে রুট যখন অর্ধশতক করলেন তখনও হাত খোলেননি মরগান। ১০ বলে ১৪ রান নিয়ে ব্যাটিংয়ে তখন তিনি।
এরপর যেন মুহূর্তেই দৃশ্যপট পালটে যেতে শুরু করে। রশিদ খান, দাওলাত জাদরান কিংবা মুজিব কাউকেই রেহাই দেননি তিনি ছক্কা মারার হাত থেকে। ২৪ রানে থাকা অবস্থায় দাওলাত জাদরান তার ক্যাচ না ফেলে দিলে হয়তো এত কাঠগড় পোহাতে হতো না আফগানদের। মাত্র ৩৬ বলে হাফসেঞ্চুরি করেন মরগান, তখন রুটের রান মাত্র ৬৫!
প্রথম পঞ্চাশ রান করতে ৩৬ বল খেললেও পরের ৫০ রান তিনি করেন মাত্র ২১ বল থেকে। যার ভেতর ছিল ৬টি ছক্কার মার ও ১টি চারের মার। বিশ্বকাপ ইতিহাসে চতুর্থ দ্রুততম সেঞ্চুরি করে ফেলেন তিনি আফগানদের বিপক্ষে। রশিদ খানকে একই ওভারে ৩টি ছক্কা হাঁকিয়ে এই মাইলফলকে পৌঁছান তিনি। এর আগে কেভিন ও’ব্রায়েন ৫০ বলে, গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ৫১ বলে, এবি ডি ভিলিয়ার্স ৫২ বলে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন।
৪৪তম ওভারে ইংল্যান্ড তিনশো পার করার পর পরবর্তী ৬ ওভারে নেয় ৯৫ রান! ৪৭তম ওভারে এক অনন্য বিশ্ব রেকর্ড গড়ে ফেলেন মরগান। এতদিন এক ইনিংসে সবচেয়ে বেশি ১৬টি ছক্কার রেকর্ড যৌথভাবে ছিল গেইল, ডি ভিলিয়ার্স, রোহিত শর্মার। সেই রেকর্ডটিকে এবার কেবলমাত্র নিজের করে নেন মরগান। গুলবাদাইন নাইবের করা ৪৭তম ওভারের পঞ্চম বলে ছক্কা মেরে ১৭টি ছক্কা মারার বিশ্বরেকর্ড গড়েন মরগান। অবশ্য ওই ওভারের চতুর্থ বলে জো রুটকে ৮৮ রানে ফিরিয়ে তাকে সেঞ্চুরি বঞ্চিত করেন নাইব। বিশ্ব রেকর্ড গড়ার পরের বলেই ১৪৮ রানের টর্নেডো ইনিংস খেলে আউট হন মরগান। তার ইনিংসে ছিল ১৭টি ছক্কা ও ৪টি চারের মার। মানে শুধু ছক্কা দিয়েই একশোর বেশি রান করেছেন মরগান!
মরগানের আউটের পর কিছু দ্রুত উইকেট হারালেও শেষ দিকে মঈন আলী ৪টি ছক্কা ও ১টি চারের সহায়তায় মাত্র ৯ বলে ৩১ রান করলে ইংল্যান্ড পায় বিশ্বকাপ ইতিহাসে তাদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ। ৬ উইকেট হারিয়ে ৩৯৭ রান করার দলগত স্কোরটি এই স্টেডিয়ামের সর্বোচ্চ স্কোরও বটে। বিশ্বকাপে ইংলিশদের ভেতর তৃতীয় সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসটি খেলেন মরগান। তার উপরেই রয়েছেন স্ট্রাউস এবং এই বিশ্বকাপে ১৫৩ রান করা জেসন রয়।
এছাড়া জো রুটের সঙ্গে মরগানের করা ১৮৯ রানের জুটিটি বিশ্বকাপে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ রানের জুটি। এর আগে ১৯৭৫ সালে ডেনিস এমিস ও ফ্লেচার মিলে ১৭৬ রানের জুটি গড়েছিলেন যা এতদিন পর্যন্ত ইংলিশদের সর্বোচ্চ জুটি ছিল।
বিশ্বকাপে এক ম্যাচে সর্বোচ্চ ছক্কাও দেখেছে আজ ম্যানচেস্টার স্টেডিয়াম। অথচ পুরো বিশ্বকাপের ভেন্যুগুলোর ভেতর এই মাঠেই গড়ে সবচেয়ে কম রান ওঠে। ৩৩টি ছক্কা হয়েছে ইংল্যান্ড ও আফগানিস্তান ম্যাচে। এটি ওয়ানডে ইতিহাসেরও সর্বোচ্চ ছক্কার নজির এক ম্যাচে। ২০১৯ সালেই ইংল্যান্ড বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার একটি ম্যাচে ৩১টি ছক্কা দেখেছিল বিশ্ব।
৩৯৭ রান টপকে যে আফগানিস্তান জিততে পারবে না সেটা একজন ক্ষুদে ক্রিকেট ভক্তও জানে। নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে সর্বসাকুল্যে ২৪৭ রান করে আফগানরা। ১৫০ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরে বিশ্বকাপ থেকে প্রথম দল হিসেবে বিদায় নেয় তারা।
টর্নেডো ইনিংস খেলে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হওয়া মরগান পুরস্কার নিতে এসে বলেন, আমার মনে হয় ক্লাইভ লয়েড আমার থেকেও বড় ছক্কা মারতে পারবেন। আজকের দিনটা আমাদের অসাধারণ কেটেছে। উইকেট খুব ভালো ছিল। আমাদের ওপেনাররা দারুণ শুরু করেছিল। বেয়ারস্টো ও রুট বেশ ভালো খেলেছে। তারপরই কিছুটা গ্যাম্বেল করি। আমি প্রথমে মনে করিনি এতটা রান করতে পারব। আমার কাছে মনে হচ্ছিল আমি পুরাতন হয়ে যাচ্ছি। আমাদের ড্রেসিং রুমে অনেকেই আছে যারা এমন ইনিংস খেলতে পারে কিন্তু সবাইকে টপকে এটা খেলা সত্যিই অকল্পনীয়। আমার কাছে মনে হয়নি এই রকম মারকুটে খেলা খেলতে পারবো। তাদের ভালো সম্ভাবনা ছিল তারা স্পিন এটাক দিয়ে আমাদের চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিল। ম্যাচের সঙ্গে সঙ্গে আমার খেলার ধরণ পাল্টেছে। আমার ক্যারিয়ারের শুরুতে যেসব শট খেলেছিলাম স্কুপ, সুইপ, সেগুলোই খেলছিলাম আজ।