পাকিস্তানকে পেলেই সেঞ্চুরির নেশায় মাতেন রোহিত শর্মা
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৯:৩২ এএম, ১৭ জুন ২০১৯ সোমবার

বিশ্ব বাবা দিবসকে এবং ভারত-পাকিস্তান ম্যাচকে সামনে রেখে ভারতের স্পোর্টস চ্যানেল স্টার স্পোর্টস পাকিস্তানকে নিয়ে মশকরা করে ‘মওকা মওকা’ ভিডিও বের করেছিল। সেই ভিডিওতে দেখা গিয়েছিল পাকিস্তানি জার্সি পরা ব্যক্তিটি ভারতীয় জার্সি পরা ব্যক্তিকে নিজের বাবা বলে সম্বোধন করছে। আসলে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বাবা হলেন ভারত এমনটাই বুঝিয়েছিলেন। সেই বিজ্ঞাপনটি নিয়ে পাকিস্তানিরা ক্ষেপলে আজ মাঠের খেলা ম্যানচেস্টারের ওল্ড ট্রাফোর্ডে পাকিস্তানকে বুঝিয়ে দিল কেন ভারতকে তাদের বাবা বলা হয় অন্তত বিশ্বকাপের মঞ্চে। বিশ্বকাপ ইতিহাসে ৭ বার ভারতের সঙ্গে মোকাবিলা করে ৭ বারই হেরেছে পাকিস্তান। একমাত্র শ্রীলংকারই পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপে ৭ বার হারার রেকর্ড রয়েছে। সেই পাকিস্তানই এখন ভারতের কাছে ৭ বার হারলো। পাকিস্তানের এই হারটি এসেছে কেবলমাত্রে একটি ইনিংসের কল্যাণেই। রোহিত শর্মার মারকুটে ১৪০ রানের সুবাদে বড় রানের ভিত পায় ভারত। আর সেটিই কাল হয়ে দাঁড়ায় পাকিস্তানের এবং শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি বৃষ্টি আইনে তারা হারে ৮৯ রানে।
পাকিস্তানের অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ নিজেকে দুর্ভাগা ভাবতেই পারেন। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ও ১৯৯২ সালের বিশ্বকাপ জয়ী অধিনায়ক ইমরান খান সরফরাজকে ম্যাচ শুরুর আগে টুইট বার্তায় টসে জিতলে ব্যাটিং নেয়ার পরামর্শ দিয়েছিলেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর কথাকে কর্ণপাত না করে বৃষ্টিস্নাত ম্যানচেস্টারে টস জিতে বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন সরফরাজ। আর সেটিই কাল হয়ে দাঁড়ায় তার জন্য।
শুরুতে এক মোহাম্মদ আমির ছাড়া আর কোনো পাকিস্তানি বোলারই ভারতীয় দুই ওপেনিং ব্যাটসম্যান রোহিত শর্মা ও লোকেশ রাহুলকে পরীক্ষায় ফেলতে পারেননি। আগের কয়েকদিন বৃষ্টি হওয়া পিচ কিছুটা পেস সহায়ক ছিল। তাই ওপেনিংয়ে বেশ সাবধানী ছিলেন রোহিত। শুরুতে আমিরের বল দেখেশুনে খেলে অপরপ্রান্ত থেকে বোলিং করা বোলারদের মেরে তুলোধুনো করতে থাকেন তিনি।
প্রথম ১০ ওভারে পাকিস্তানি পেসারদের কোনো রকম সুযোগ না দিয়ে বিনা উইকেটে ৫৩ রান তুলেন দুই ওপেনার। তবে রোহিত শর্মা তার সেঞ্চুরিটির জন্য শাদাব খানকে ধন্যবাদ দিতেই পারেন। ১১তম ওভারের পঞ্চম বলে নিশ্চিত রানআউট থেকে বেঁচে যান শাদাব খানের কল্যাণে। রাহুল ডিপ স্কয়ার লেগে ঢেলে দিয়ে এক রান নেয়ার জন্য ছুটেন, কিন্তু রোহিত দ্বিতীয় রান নেয়ার জন্য দৌড় দিয়ে অর্ধেক ক্রিজ পার হয়ে যাওয়ার পরেও তিনি বেঁচে যান। কেননা শাদাব খান থ্রোটি করেছিলেন বোলারের কাছে। যদি সরফরাজের কাছে করতেন তাহলে নিশ্চিতভাবেই আউট হতেন রোহিত।
২০১৭ সালের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনালে বুমরাহর নো বলে প্রাণ ফিরে পেয়ে পরবর্তী সেঞ্চুরি করেছিলেন ফখর জামান। এবার রোহিত শর্মাও সেটি প্রমাণ করলেন বড় মঞ্চে এমন ভুল করা কতটা দণ্ডনীয় অপরাধ। ৩৮ রানে প্রাণ ফিরে পাওয়ার রোহিত শর্মা মাত্র ৩৪ বলে তুলে নেন অর্ধশতক। তার ছক্কা ও বাউন্ডারির বৃষ্টিতে পাকিস্তানি ফিল্ডাররা কোন ক্যাচ না ধরতে পারলেও গ্যালারিতে আসা দর্শকরা ঠিকই ক্যাচ ধরেছেন কয়েকটা।
রোহিতকে যোগ্য সঙ্গীর মত সহায়তা করে গেছেন ধাওয়ানের বদলি হিসেবে ওপেনিংয়ে নামা লোকেশ রাহুল। ৭৮ বলে ৫৭ রান করে ওয়াহাব রিয়াজের বলে বাবর আজমের কাছে ক্যাচ দিয়ে আউট হন তিনি। ২৪তম ওভারে ভাঙ্গে ১৩৬ রানের ওপেনিং জুটি। এরপর ক্রিজে আসেন সময়ের সেরা ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি। কোহলিকে কোনো রকম সুযোগ না দিয়ে এদিন যেন নিজেই একা খেলার নেশায় মত্ত ছিলেন রোহিত।
৮৫ বলে নিজের ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৪তম সেঞ্চুরিটি তুলে নেন তিনি। সেই সঙ্গে এবারের বিশ্বকাপে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটির দেখা পেয়ে যান মাত্র তিনটি ম্যাচ খেলে। বিশ্বকাপে এলেই যেন রোহিত শর্মা আগুন ঝরান। এর আগে চারটি বিশ্বকাপ ইনিংসে তিনি খেলেন ৫৭, ১২২, ৫৬ ও ৯৫ রানের ইনিংসগুলো। বোঝাই যাচ্ছে এটা তারই মঞ্চ।
সেঞ্চুরি করে যেন আরো বিধ্বংসী রোহিত। ১১৩ বলে ১৪০ রানের মারকাটারি এক ইনিংস খেলে হাসান আলীর বলে যখন আউট হন তখন ভারতের যা দরকার ছিল তা তিনি দিয়ে গেছেন। ৩৯তম ওভারে দলীয় ২৩৪ রানে তিনি আউট হন। ভাঙে বিরাট কোহলির সঙ্গে তার ৯৮ রানের জুটি।
পাকিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ১৪৩* রান করেছিলেন ২০০৩ বিশ্বকাপে আন্ড্রু সায়মন্ডস। রোহিত শর্মাই দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ইনিংস খেললেন তাদের বিরুদ্ধে। এছাড়া ইংল্যান্ডে সর্বোচ্চ ৪ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে ধাওয়ানের সঙ্গে যুগ্নভাবে শীর্ষে উঠে আসলেন তিনি ইংলিশদের মাঠে সেঞ্চুরি করার দিক দিয়ে। তবে ধাওয়ানের থেকে এক ইনিংস কম খেলে ১৮ ইনিংসে ইংলিশ পরিবেশে হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেন এই ভারতীয় ওপেনার। ছক্কাতেও ছাড়িয়ে গেছেন তিনি সব ভারতীয়কে। ৩৫৮টি ছক্কা মেরে ভারতের এখন সর্বোচ্চ ছক্কা হাঁকানোর মালিক রোহিত শর্মা। পাকিস্তানের বিপক্ষে সর্বশেষ এশিয়া কাপের ম্যাচেও সেঞ্চুরি করেছিলেন রোহিত শর্মা। ১৬ ম্যাচে তাদের বিপক্ষে করেছেন ৭২০ রান।
পাকিস্তানকে ৩৩৭ রানের লক্ষ্য দিলে ভারতীয় বোলারদের তাণ্ডবে মাত্র বৃষ্টি আইনে ৪০ ওভারে মাত্র ২১২ রান করতে পারা পাকিস্তান ৬ উইকেট হারিয়ে বৃষ্টিতে সময় নষ্ট হওয়ায় ম্যাচ কমিয়ে ৪০ ওভারে আনা হয়। যার দরুন পাকিস্তান হারে ৮৯ রানে।
ম্যান অব দ্য ম্যাচ পুরস্কার নিতে এসে রোহিত শর্মা বলেন, দল হিসেবে এভাবে খেলতে পেরে আমি বেশ খুশি। আমরা চেয়েছিলাম মাঠে যেয়ে এমন ক্রিকেটটাই খেলতে। আগের ম্যাচটি বৃষ্টিতে না হওয়াতে খুব হতাশ হয়েছিলাম। আমাদের চিন্তাই হলো নিখুঁত ক্রিকেট খেলা এবং আমরা আজ সেটা করেছি। আমি যেভাবে আউট হয়েছি সেটা নিয়ে খুব হতাশ আমি নিজেই। হাসান আলী মাত্রই মিড অন পেছনে পাঠিয়ে ফাইন লেগের ফিল্ডারকে সামনে এনেছে। আমার তরফ থেকে এটা ভুল হয়েছে। যখন আপনি সেট হয়ে যাবেন তখন যত রান সম্ভব করে আসা উচিত, সুতরাং আমার আউট নিয়ে আমি সত্যিই হতাশ। সত্যি কথা বলতে, আমি ডাবল হান্ড্রেডের কথাই চিন্তা করছিলাম তখন। এটা খুব ভালো পিচ এবং চাইছিলাম যতটা সম্ভব ব্যাটিং করে যেতে। আমরা চাইছিলাম আমাদের জুটিগুলোর মাধ্যমে তখনই ম্যাচটাকে শেষ করে দিতে কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত ভুল সময়ে আউট হয়েছি। আমার কাছে মনে হয়, রাহুল বেশ ভালো খেলেছে। সে কিছুটা সময় নিয়েছে যেটা দরকার ছিল তার জন্য। সে নতুন বলে দেখে শুনে খেলছিল কিন্তু সেও দুর্ভাগ্যবশত ভুল সময়ে আউট হয়েছে। শুরু কিছু ওভার সবসময়েই বিপজ্জনক সবার জন্য। আমরা নতুন বলে সব খেলে আসতে চেয়েছিলাম এবং শুরুতেই আমরা ভালো শুরু পেয়ে যাই এবং সেখান থেকেই ইনিংস বড় করি।