চুল কেন পাকে?
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৩:৩১ পিএম, ১৬ জুন ২০১৯ রোববার

চুল ছাড়া যেন সৌন্দর্যতা অপূর্ণ থেকে যায়! মুখমন্ডলের এক অপরিহার্য অংশ সুন্দরের বিবেচনা করলে কার চেহারা কতটা সুন্দর তা অনেকটাই চুলের উপর নির্ভর করে। আবার চুলের যত্ন নিতেও আমরা ব্যয় করি ঘন্টার পর ঘন্টা সময়। অনেকের আবার চুল পড়া বা পেকে যাওয়া নিয়ে দুশ্চিন্তার শেষ নেই। চুল পড়া বা পাকা ঠিক করতে ব্যয় করি হাজার হাজার টাকা। কিন্তু কখনো কি ভেবে দেখেছেন আমাদের চুল কেন পেকে সাদা হয়? অনেকেই মনে করেন চুল পাকার কারণ বার্ধক্য। আবার কারো কারো অল্প বয়সে চুল পাকে বলে অনেকেই মনে করে চুল পাকার পেছনের কারণ হতাশা। কিন্তু আসলেই কি তাই? ঠিক কি কারণে আমাদের চুল পেকে হলুদ হয়?
চুল পাকার কারণ জানার পূর্বে আমাদের জেনে নিতে হবে চুলের গঠন সম্পর্কে। চুল মূলত দুই ভাগে বিভক্ত। শ্যাফট এবং রুট। শ্যাফট হল চুলের উপরিভাগ অর্থাৎ চুলের যে অংশ কালো বা অন্যান্য রঙের হয় সেই অংশ। আর রুট হল চুলের নিচের অংশ অর্থাৎ যে অংশ আমাদের স্কাল্প এর সাথে যুক্ত থাকে। প্রতিটি চুলের রুট ত্বকের নিচের একটি টিউবে যুক্ত থাকে। এই টিউবকে বলা হয়ে থাকে হেয়ার ফসিল। আবার এই হেয়ার ফসিলের অভ্যন্তরে একটি নির্দিষ্ট পরিমা পিগমেন্ট সেল থাকে। এসকল পিগমেন্ট সেল অনবরত মেলানিন নামক একটি ক্যামিক্যাল তৈরি করতে থাকে।
এই মেলানিনই মূলত চুলের রঙ এর জন্য দায়ী। কার চুল কতটা কালো বা ঘন তা নির্ভর করে ওই মানুষের হেয়ার ফসিল কতটা মেলানিন প্রস্তুত করে। এই মেলানিন শুধু চুলই নয় বরং শরীরের রং এবং কার শরীর কতটা রোদে পুড়বে তাও নির্ধারণ করে। যার শরীর যত বেশি মেলানিন প্রস্তুত করে তার শরীরে রং তত কাল। আবার শরীরে যত বেশি মেলানিন থাকবে শরীর সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে ততটা সুরক্ষিত। সবার শরীরই কমবেশি মেলানিন প্রস্তুত করে। তাহলে কেন বেশিরভাগ মানুষের চুলই কাল থেকে সাদায় রূপান্তরিত হয় ?
বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের হেয়ার ফসিলের পিগামেন্ট সেলগুলোর মৃত্যু হয় এবং প্রতিটি হেয়ার ফসিলের অভ্যান্তরের পিগমেন্ট সেলগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে মেলানিন উৎপাদন করতে পারে না। যে কারণে চুলের রঙ কালো থেকে ধীরে ধীরে ফ্যাকাসে হতে থাকে এবং এক পর্যায়ে পিগমেন্ট সেলগুলো মেলানিন উৎপাদন প্রায় বন্ধ করে দেয়। ঠিক তখনি চুল পুরোপুরি সাদায় পরিণত হয়। ঠিক একই কারণে বয়স্ক মানুষের শরীরের রঙ ও কিছুটা ফ্যাকাসে হয়ে যায় এবং রোদে চামড়া পুড়ে যায়।কিন্তু ঠিক কোন বয়সে চুল পাকা শুরু হয়?
ভিন্ন ভিন্ন মানুষের চুল পাকার সময় এবং হার দুটিই ভিন্ন হয়ে থাকে। কার কোন বয়সে চুল পাকবে তা মূলত নির্ভর করে তার জীনের উপরে। বংশগত ভাবে বাবা মা বা দাদা দাদীর চুল যতটা বয়সে পেকেছে তার আশেপাশের বয়সেই ওই ব্যাক্তির চুল পাকবে। তবে বেশিরভাগ ছেলেদেরই ৩০ থেকে ৩৫ বছর বয়সে প্রথম একটি বা দুইটি চুল পেকে সাদা হয়। প্রথম চুল পাকার ১০-১২ বছরের মধ্যেই ছেলেদের চুল পুরোপুরি পেকে যায়। তবে মেয়েদের ক্ষেত্রে পরিস্থিতি কিছুটা ভিন্ন। ছেলেদের তুলনায় মেয়েদের চুল দেরিতে পাকে।
গড়ে বেশির মেয়েদের প্রথম চুল ৩৫-৪০ বছরে পাকে এবং ৫০ বছরের মধ্যে সকল চুল পেকে যায়। তবে কিছু কিছু মানুষের চুল বয়সের আগে কেন পাকে? অল্প বয়সে চুল পাকার কারন মূলত বংশগতও হতে পারে। অথবা ঐসব মানুষের যদি থাইরয়েড এর রোগ কিংবা শরীরে ভিটামিন বি১২ এর অভাব থাকে তবেই চুল তারাতাড়ি পেকে যায়। হতাশা বা মানসিক চাপ কি চুল পাকতে সহায়তা করে? না এটি একটি প্রচলিত কুসংস্কার। বিজ্ঞানীরা গবেষণায় প্রমাণ করেছেন যে হতাশা বা মানসিক চাপ চুল পাকার জন্য দায়ী নয়।