কোথায় থামবেন ইমরান তাহির?
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১২:১৫ পিএম, ১৬ জুন ২০১৯ রোববার

বয়সটা ৪০ পেরিয়েছে আরো ৭৯ দিন আগে। কিন্তু যে কেউ তাকে দেখে বলবে এ যেন ২৪ বছরের এক টগবগে তরুণ বোলার। বলছি দক্ষিণ আফ্রিকার লেগ স্পিনার ইমরান তাহিরের কথা। তাহিরের একটি উইকেট নেয়া দেখার জন্য হলেও এখন দর্শকরা স্টেডিয়ামে আসেন তার খেলা দেখতে।
উইকেট পাওয়ার পর যার দৌড় দেখার জন্য মুখিয়ে থাকেন সমর্থকেরা। স্টেডিয়ামের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্তে যেন কয়েক সেকেন্ডেই পার করে ফেলেন তিনি। আফগানদের বিপক্ষে ম্যাচে এবারের বিশ্বকাপে তাহিরের সবচেয়ে বেশি দৌড় দেখা গেল। চারটি উইকেট নিয়ে আফগানদের ব্যাটিং মেরুদণ্ড ভেঙে দেয়া তাহির উইকেট নিয়ে করেছেন উদাম উদযাপন। কেননা, এই জয়টা যে তাদের খুব দরকার ছিল। এবারের বিশ্বকাপের প্রথম জয় বলে কথা, একটু বেশি কিছুই ছিল তাহিরের জন্য।
ওয়েলসের রাজধানী কার্ডিফের ছোট্ট স্টেডিয়ামে পেস সহায়ক পিচে টসে জিতে অবধারিতভাবেই বোলিং করার সিদ্ধান্ত নেন প্রোটিয়া অধিনায়ক ফ্যাফ ডু প্লেসিস। তার সিদ্ধান্ত যে ভুল ছিল না সেটা প্রমাণ করেন প্রোটিয়া বোলাররা। এই ম্যাচে প্রথমবারের মত দক্ষিণ আফ্রিকার একাদশে সুযোগ পান বা হাতি পেসার বেউরান হেন্ডরিকস। যদিও বল হাতে ৫ ওভারে ২৫ রান দিয়ে কোন উইকেট নিতে পারেননি তিনি।ু কিন্তু দলের অন্যান্য বোলাররা ছড়ি ঘুরিয়েছেন আফগান ব্যাটসম্যানদের উপর।
প্রথম ওভার থেকেই রাবাদা এবং হেন্ডরিকসের পেস এবং সুইংয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে আফগান দুই ওপেনার হজরতউল্লাহ জাজাই ও নুর আলী জাদরান। ৭ ওভার পর্যন্ত সবই ঠিক ছিল। বিনা উইকেটে ৩৯ রান করেছিল আফগানিস্তান। কিন্তু এরপরেই শুরু হয় ধস। জাজাইকে ২২ রানে আউট করে প্রথম উইকেটের পতন ঘটান ওয়ানডে র্যাংকিংয়ের পঞ্চম সেরা বোলার কাগিসো রাবাদা।
দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে রহমত শাহকে নিয়ে ১৯ রানের জুটি গড়েন নুর আলী জাদরান। প্রথম ১৫ ওভারে ৫৫ রান তোলে আফগানরা। ১৬তম ওভারের প্রথম বলেন রহমত শাহকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন ক্রিস মরিস। সেই থেকে যে ধস শুরু হয় আফগান ব্যাটিং লাইনআপে আর থামাথামি ছিল না। ২০ ওভার শেষে আফগানদের রান যখন ৬৯ রান ২ উইকেট হারিয়ে তখনই বাধ সাধে বৃষ্টি।
প্রায় এক ঘন্টা খেলা বন্ধ থাকার পর স্থানীয় সময় ৪টা ৩১ মিনিটে আবারো খেলা মাঠে গড়ায়। যদিও আফগানদের ইনিংস থেকে কোনো ওভার কেটে নেয়া হয়নি। বৃষ্টির পরের প্রথম ওভার থেকে যেন শুরু হয় ফেহ্লুকায়ো ও তাহির ঝড়। ২১তম ওভারের চতুর্থ বলেই হাসমতউল্লাহ শাহিদিকে ৮ রানে ফেরান ফেহলুকায়ো। আফগান ইনিংসের পরবর্তী গল্পটা শুধুই তাহিরময়।
ইনিংসের ২২তম ওভারে প্রথমবারের মত বোলিংয়ে আসেন তাহির। প্রথম বলে নুর আলি জাদরানকে দারুণ এক গুগলিতে বোল্ড করেন তাহির। উইকেট নিয়ে যেন এ পাশ থেকে ও পাশে দৌড়াতে থাকেন তিনি। ওই ওভারেরই পঞ্চম বলে আবারো আঘাত হানেন তিনি। এবারের বিশ্বকাপে প্রথমবারের মত দলে জায়গা পাওয়া সাবেক অধিনায়ক আজগর আফগানকে ০ রানে ফিরিয়ে নিজের দ্বিতীয় উইকেট লুফে নেন তিনি।
এর পরের ওভারে আফগানদের সবচেয়ে সেরা অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবীকে ১ রানে বোল্ড করে আবারো ফেহলুকায়ো মেতে ওঠেন উল্লাসে। ৬৯/২ থেকে নিমিষেই আফগানিস্তান পরিণত হয় ৭০/৬ এ। এ যেন তাসের ঘরের ধ্বংস হওয়াকেও হার মানাবে। নিজের তৃতীয় ওভারে এসে তাহির এবার তুলে নেন অধিনায়ক গুলবাদাইন নাইবের উইকেট। এডুইন মারকারম দারুন একটি ক্যাচ ধরেন মিড উইকেটে।
৭৭ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে আফগানিস্তান যখন একশো এর নিচে অলআউট হওয়ার শঙ্কায় তখনই ত্রাতা হয়ে আসেন রশিদ খান। ২৫ বলে ৩৫ রান করে আফগানদেরকে একশো পার করান এই অলরাউন্ডার। ছোট্ট এই ক্যামিওতে তিনি ৬টি চার হাঁকান। তিনি পরিণত হন তাহিরের চতুর্থ শিকারে। ম্যাচের ৩৪তম ওভারে তাহিরের প্রথম ৪ বলে রশিদ খান একাই নেন ১৪ রান। পঞ্চম বলে আর পেরে ওঠেননি। ডুসেনের কাছে ক্যাচ দিয়ে বাড়ি ফেরেন রশিদ। ৩৫তম ওভারের প্রথম বলেই আফগানদের শেষ উইকেটের পতন ঘটিয়ে তাদেরকে মাত্র ১২৫ রানেই গুটিয়ে দেন ক্রিস মরিস। তিনিও নিয়েছেন ৩ উইকেট।
আফগানদের বিপক্ষে চার উইকেট নেয়ার সুবাদে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চবার ৪ উইকেট নেয়ার রেকর্ড গড়লেন তাহির। ১৮টি ম্যাচের ভেতর ৫টি ম্যাচেই তিনি পেয়েছেন ৪ উইকেট। যা তাকে আসন দিয়েছে অনন্য উচ্চতায়। মুরালিধরন ৪০টি, আফ্রিদি ২৭, শেন ওয়ার্ন ১৭ ও মিচেল স্টার্ক ১৩টি ম্যাচ খেলে ৪ উইকেট পেয়েছেন চারবার করে।
বৃষ্টি আইনে ৪৮ ওভারে দক্ষিণ আফ্রিকার লক্ষ্য দাঁড়ায় ১২৭ রান। এই ছোট্ট লক্ষ্য মাত্র ১ উইকেট হারিয়েই টপকে যায় তারা। প্রথম উইকেট জুটিতে হাশিম আমলার সঙ্গে ১০৪ রানের জুটি গড়েন ডি কক। ৬৮ রান করে নাইবের বলে আউট হন তিনি। ওয়ান ডাউনে নামা ফেহলুকায়ো ছক্কা হাঁকিয়ে প্রোটিয়াদের জয় নিশ্চিত করেন ১০৯ বল বাকি রেখে। আমলা ৪৩ রানে অপরাজিত ছিলেন।
ম্যান অফ দ্য ম্যাচ হওয়া ইমরান তাহির বলেন, আমার পারফরম্যান্স নিয়ে আমি আজ খুবই খুশি। আমার প্রথম গুগলিটা আশীর্বাদস্বরূপ ছিল এবং সবসময় চেষ্টা করেছি ব্যাটসম্যানকে বিভ্রান্ত করতে। ভাগ্যপ্রসূত সেগুলো কাজে লেগেছে। আমরা আমাদের বিশ্বাস করি। আমরা গত দুই বছর যাবত বেশ ভালো ক্রিকেট খেলছি। অবশ্যই আজকের পারফরম্যান্সটা আমি উপভোগ করেছি। আমি খুব খুশি যেভাবে বল আমার হাতে ছিল আজ। দলে আমার একটি অবস্থান রয়েছে। সেভাবেই সবসময় খেলতে চেষ্টা করি এবং প্রতিনিয়ত পরিশ্রম করে যাচ্ছি। আজকের জয়টা পেয়ে সত্যিই ভালো লাগসে খুব। আমরা আবহাওয়াকে ধরে রাখতে পারবো না কিন্তু আমাদেরকে চেষ্টা করতে হবে আজকের মত শক্ত পারফরম্যান্স করতে। পেসাররা আমার কাজটা সহজ করে দিয়েছে। সার্বিকভাবে এটা দারুণ পারফরম্যান্স। আমি উইকেটে কিছু টার্ন পেয়েছি, কিন্তু এটা উইকেট টু উইকেটই ছিল। আজ তেমন বৈচিত্র্য আনার চেষ্টা করিনি বোলিংয়ে। সেলিব্রেশন পার্টটা আমার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। জয়টাও আমাদের জন্য ঠিক তেমনই। আমরা চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত। আমাদের পরবর্তী ম্যাচ বার্মিংহ্যামে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। তাদের বিপক্ষে লড়াইয়ের জন্য মুখিয়ে আছি। রশিদ খান কিছু ভালো শট খেলেছে কিন্তু আমি আমি তাকে এখন বলছি, ওই শটের কারণেই তার উইকেট আমি নিয়েছি।