সোমবার   ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫   পৌষ ১৫ ১৪৩২   ০৯ রজব ১৪৪৭

দেশের পোশাক খাত নিয়ে গভীর ষড়যন্ত্র, কর্মবিরতির জেরে বন্ধ ঘোষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক 

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৪:২৬ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ বুধবার

দেশে প্রচলিত শ্রম আইনের ১৩-এর ১ নং ধারায় বলা হয়েছে, কোনো প্রতিষ্ঠানের কোনো শাখা বা বিভাগে বেআইনি ধর্মঘটের কারণে মালিক ওই শাখা বা প্রতিষ্ঠান আংশিক কিংবা সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিতে পারবেন এবং এরূপ বন্ধের ক্ষেত্রে ধর্মঘটে অংশগ্রহণকারী শ্রমিকরা কোনো মজুরি পাবেন না। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দেশের পোশাক শিল্প মালিকরা আইনের এ ধারা অনুসরণ করে কারখানা বন্ধ ঘোষণা করছেন।

শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন কল-কারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের (ডিআইএফই) তথ্য অনুযায়ী, ২৪ ডিসেম্বর শ্রমিকদের কর্মবিরতির জের ধরে গাজীপুর কোনাবাড়ীর সাতটি কারখানা শ্রম আইনের ১৩-এর ১ ধারা অনুসরণ করে বন্ধ ঘোষণা করেছেন সংশ্লিষ্ট মালিকপক্ষ। কারখানাগুলোর মধ্যে আছে মণ্ডল, কটন ক্লাব, মনটেক্স, ডেল্টা গ্রুপ, মল্লিক, ইসলাম নিট ও এমা সিনটেক্স। কারখানাগুলোয় বন্ধের নোটিসও টাঙিয়ে দেয়া হয়েছে।

৮ ডিসেম্বর থেকে নারায়ণগঞ্জ, আশুলিয়া ও গাজীপুরে শিল্প অধ্যুষিত এলাকায় একের পর এক পোশাক কারখানায় শ্রমিকদের মধ্যে কর্মবিরতির প্রবণতা লক্ষ করা যাচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে হয়েছে ভাংচুর ও পুলিশের কাঁদানে গ্যাসের শেল ছোড়ার ঘটনা। ৯ ডিসেম্বর থেকে প্রতিদিনই কর্মবিরতি ও কারখানা বন্ধের ঘটনা বাড়ছে। ৯ ডিসেম্বর কর্মবিরতির কারণে বন্ধ হয় সাত-আটটি কারখানা। পরদিন সংখ্যাটি বেড়ে দাঁড়ায় প্রায় ১২। ১১ ডিসেম্বর বন্ধ হয় প্রায় ২৩টি, ১২ ডিসেম্বর ৩৬টি ও ১৩ ডিসেম্বর বন্ধ হয় ৪৩টি কারখানা। এরপর ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবস উপলক্ষে সরকারি ছুটি থাকায় কর্মবিরতি কমে আসে।

এদিকে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সরকার শ্রম সংক্রান্ত ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট কোর কমিটির সভা করে নতুন মজুরি কাঠামোয় কোনো ত্রুটি থাকলে তা জানুয়ারির মজুরি পাওয়ার পর আলোচনাসাপেক্ষে দূর করার ঘোষণা দেন। পৃথক সংবাদ সম্মেলনে সরকার ও খাত সংশ্লিষ্ট মালিক সংগঠনগুলো বেতন কাঠামোর ত্রুটি দূর করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে শ্রমিকদের কাজে যোগদানের আহ্বান জানান। কিন্তু এর পরও শিল্প অধ্যুষিত এলাকাগুলোর শ্রম পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি।

শিল্প ও শ্রম সংশ্লিষ্ট আইন-শৃঙ্খলা প্রয়োগকারী সংস্থার সূত্রগুলো বলছে, ১৬ ডিসেম্বরের পর কর্মবিরতিতে যাওয়া কারখানার সংখ্যা কমে এলেও এ প্রবণতা একেবারে বন্ধ হয়ে যায়নি। ২৩ ডিসেম্বর আশুলিয়া ও গাজীপুর এলাকার ১৪টি কারখানায় শ্রমিকরা কর্মবিরতির মাধ্যমে নতুন মজুরি কাঠামো নিয়ে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেন। ডিআইএফইর তথ্যমতে, গতকাল পর্যন্ত প্রায় ৫০টি কারখানায় কর্মবিরতির ঘটনা ঘটেছে।

এদিকে গতকাল ঢাকার মিরপুরে কয়েকটি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের মধ্যে অস্থিরতা দেখা দেয়। বকেয়া বেতন-ভাতা পরিশোধের দাবিতে রাজধানীর মিরপুরের কালশী ও পল্লবীর সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকরা। একই কারখানায় ২৪ ডিসেম্বরও সমস্যা দেখা দেয়। ডিআইএফই সূত্র জানিয়েছে, মালিকপক্ষের সঙ্গে আলোচনা এবং এ এলাকার সংসদ সদস্যের আহ্বানে সাড়া দিয়ে শ্রমিকরা কাজে যোগ দিয়েছেন।