সোমবার   ২৯ ডিসেম্বর ২০২৫   পৌষ ১৫ ১৪৩২   ০৯ রজব ১৪৪৭

সারা দেশে নির্বাচনী দায়িত্ব পালনে সেনাবাহিনী

নিজস্ব প্রতিবেদক 

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৩:৪৭ পিএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ বুধবার

সারা দেশে সেনা মোতায়েন শুরু হয় রোববার মধ্যরাতে। বর্তমানে বিভিন্ন জেলায় স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নির্বাচনী দায়িত্ব পালন শুরু করেছেন সেনাসদস্যরা। 

খুলনাখুলনায় সেনা মোতায়েন নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি দেখা গেলেও এখানে এখনো যথাযথ নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি হয়নি বলে দাবি করছেন বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোট ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা। নির্বাচনকালীন আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব পুরোপুরি সেনাবাহিনীর ওপর অর্পণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

বিষয়টি নিয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা-২ আসন থেকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, সেনাবাহিনী মোতায়েন হওয়ায় জনগণের মনে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান নিয়ে ইতিবাচক মনোভাবের সৃষ্টি হয়েছে। কাজেই নির্বাচনকালীন আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব তাদের ওপর পুরোপুরি অর্পণ করতে হবে।

তিনি বলেন, এখনো খুলনার প্রতিটি আসনে নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা, ক্যাম্প ভাংচুর, প্রচারণায় বাধাদান, প্রচার মাইকের মাইক্রোফোন কেড়ে নেয়ার মতো ঘটনাও ঘটছে। ফলে এখন পর্যন্ত নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ সৃষ্টি হয়নি। সেনা গোয়েন্দাদের হাতে থাকা তালিকা ধরে আসামি গ্রেফতারের দাবি জানিয়ে নজরুল ইসলাম মঞ্জু বলেন, আমরা যেন নির্বাচনে কাজ করতে পারি, নির্বাচন কমিশন ও সেনাবাহিনী সে ব্যবস্থা করবে বলে আমরা আশা করছি।

অন্যদিকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা এসএম কামাল বলেন, আমরা একটি সুষ্ঠু নির্বাচন চাই। সে কারণে নির্বাচন কমিশন সেনা, নৌ ও বিজিবি মোতায়েন করেছে। নির্বাচন কমিশনের এ উদ্যোগকে আমরা স্বাগত জানাই।

তিনি পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, জামায়াত এখন বিএনপির ওপর সরাসরি ভর করেছে। সন্ত্রাসী, জঙ্গি, বোমাবাজরা শহরের বিভিন্ন স্থানে নাশকতা করছে। খুলনা অঞ্চলে জামায়াতের আট নাশকতা সৃষ্টিকারী প্রার্থী হয়েছে। তারা নাশকতা করে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে ষড়যন্ত্র করছে।

রংপুরসারা দেশের মতো রংপুরেও কাজ শুরু করেছে সেনাবাহিনী। বিষয়টি নিয়ে খানিকটা আশার সঞ্চার হয়েছে সাধারণ ভোটারদের মনেও। রংপুর সিটি করপোরেশনের ধাপ এলাকার বাসিন্দা সহিদুল ইসলাম বলেন, এতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড অনেক কমে যাবে। ঝুঁকিপূর্ণ ভোটকেন্দ্রগুলোয় ভোটারের উপস্থিতিও বাড়বে।

আওয়ামী লীগসহ মহাজোটের নেতাদের দাবি, রংপুরে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক ভালো। সবখানে নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে। নির্বাচনকালে সেনাবাহিনী মাঠে থাকায় নাশকতার আতঙ্ক ভোটারদের মনে দানা বাঁধবে না।

রংপুর-৬ আসনের মহাজোটের প্রার্থী স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর নির্বাচন পরিচালনা কমিটির অন্যতম সদস্য ও জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি মেহেদী হাসান সিদ্দিকী রনি বলেন, রংপুর জেলার নির্বাচনী পরিবেশ প্রথম থেকেই অনেক ভালো। আইন-শৃঙ্খলার কোনো অবনতি হয়নি। এককথায় নির্বাচনী আমেজ বিরাজ করছে। সেনাবাহিনী মাঠে নামায় নাশকতার আতঙ্ক কেটে যাবে।

বগুড়াবগুড়ায় সেনাসদস্যদের কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জেলার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকাগুলোয় এখন কিছুটা শান্ত পরিবেশ দেখা যাচ্ছে। গতকাল এখানে অপ্রীতিকর কোনো ঘটনা ঘটার খবর পাওয়া যায়নি। জেলা নির্বাচন রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় জানিয়েছে, বগুড়ায় এবার ৬৫০ সেনাসদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ১২টি উপজেলা নিয়ে গঠিত সাতটি সংসদীয় আসনে সেনাক্যাম্প বসানো হয়েছে। জেলা সদরে রিজার্ভ থাকবেন ১৫০ সেনাসদস্য। এর মধ্যে বগুড়া সদর উপজেলায় দায়িত্ব পালন করবেন ৬০ জন। এছাড়া পুলিশ, র্যাব, আনসারসহ অন্যান্য নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাদের নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করবেন।

ঝালকাঠিএকাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ঝালকাঠি জেলার দুটি আসনের জন্য ছয় প্লাটুন সেনাসদস্য মোতায়ন করা হয়েছে। একই সঙ্গে মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবি সদস্যদেরও।

কুড়িগ্রামসেনাসদস্যদের সক্রিয় উপস্থিতি দেখা যাচ্ছে কুড়িগ্রামেও। সেনাসদস্যদের পাশাপাশি এখানকার আইন-শৃঙ্খলা ও নির্বাচনী পরিবেশের উন্নয়নে মোতায়েন করা হয়েছে বিজিবির ১৭টি প্লাটুনও। তবে এর পরও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে এখনো কিছুটা সংশয় দেখা যাচ্ছে।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. জাহাঙ্গীর আলম রাকিব জানান, আমরা বিভিন্ন উপজেলায় সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত করার জন্য মতবিনিময় সভা করছি। আমরা সাধারণ ভোটারদের এ নিশ্চয়তা দিচ্ছি, সেনাবাহিনী আপনাদের কেন্দ্রে গিয়ে সুষ্ঠুভাবে ভোটাধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে সহযোগিতা করবে।

অন্যদিকে জেলা রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক মোছা. সুলতানা পারভীন জানান, কুড়িগ্রামে সেনা মোতায়েনের আগেও পরিবেশ শান্তিপূর্ণ ছিল, পরেও রয়েছে। এতে কোনো ধরনের পরিবর্তন হয়নি।

মেহেরপুরমেহেরপুরে সুষ্ঠু নির্বাচনী পরিবেশ নিশ্চিত করার পাশাপাশি আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। গতকালও জেলার বিভিন্ন স্থানে সেনাসদস্যদের উপস্থিতি দেখা গেছে। মেহেরপুরের রিটার্নিং কর্মকর্তা আতাউল গনি জানান, জেলার তিন উপজেলার জন্য মেজর শাহরিয়ারের নেতৃত্বে ২৩০ জন সেনাসদস্যকে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে নিয়োজিত করা হয়েছে।

সাতক্ষীরাউপকূলীয় জেলা সাতক্ষীরায় নিয়োজিত সেনাসদস্যরা এখন মাঠে সক্রিয়। সেনা মোতায়েনের পর জেলা শহরে ধানের শীষের পক্ষে প্রচারণায় কিছুটা চাঙ্গা ভাব দেখা গেছে। এর আগে প্রতীক বরাদ্দের পর এখানে ধানের শীষের পক্ষে সক্রিয় প্রচারণা চালাতে দেখা গেছে মাত্র একদিন।

সাতক্ষীরার জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা এসএম মোস্তফা কামাল জানান, মোতায়েনকৃত সেনাসদস্যরা সাতক্ষীরার সাত উপজেলা সদরসহ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ক্যাম্প স্থাপন করেছেন। যশোর ৫৫ পদাতিক ডিভিশনের ৭০০ সদস্যকে জেলায় মোতায়েন করা হয়েছে। নির্বাচনে তারা স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া সাতক্ষীরা-২ আসনের ভোটারদের ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দেয়ার বিষয়েও ধারণা দিচ্ছেন তারা।

নারায়ণগঞ্জনারায়ণগঞ্জে মোতায়েনকৃত সেনাসদস্যদের গতকাল নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা, বন্দর, সোনারগাঁসহ বিভিন্ন এলাকায় টহল দিতে দেখা গেছে।

জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া বলেন, নারায়ণগঞ্জের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে যাতে কোনো ধরনের অবনতি না ঘটে, নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে সেদিকে সতর্ক নজর রাখছি। নারায়ণগঞ্জে সেনাবাহিনীসহ যৌথ টিম টহল দিচ্ছে। সুষ্ঠু, সুন্দর, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজনের জন্য যা যা করার প্রয়োজন, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে।