মঙ্গলবার   ১৭ জুন ২০২৫   আষাঢ় ৩ ১৪৩২   ২০ জ্বিলহজ্জ ১৪৪৬

পঞ্চম কিউই পেসার হিসেবে যে গৌরব অর্জন করলেন নিশাম

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১০:২৩ এএম, ১১ জুন ২০১৯ মঙ্গলবার

বিশ্বকাপ শুরুর আগে অনেকেই বলেছিল এবারের বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে ব্যাটসম্যানদের। কিন্তু দিন যত এগোচ্ছে ততই তাদের ধারণাকে ভুল প্রমাণ করতেছেন বোলাররা। পেস, বাউন্স দিয়ে ব্যাটসম্যানদের দিশেহারা করতেছেন একের পর এক ম্যাচে। গেল শনিবার আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচেও যেন সেটারই পসরা সাজিয়ে বসেছিল নিউজিল্যান্ডের বোলাররা। তাদের পেস এবং বাউন্সে নাকানিচুবানি খেতে থাকে আফগান ব্যাটসম্যানরা। এক জিমি নিশামই পুরো গুড়িয়ে দেন আফগান ব্যাটিং স্তম্ভকে। পাশাপাশি লকি ফার্গুসনও কার্যকরী ভূমিকা রাখেন। ৫ উইকেট নিয়ে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মত ফাইফার পেলেন নিশাম। 

বৃষ্টিস্নাত আবহাওয়া টসে জিতে অবধারিতভাবেই বোলিংয়ের সিদ্ধান্ত নেন কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসন। কিন্তু আফগানরা এদিন শুরুতে বেশ ভালো কৌশল নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমেছিল। প্রথম দিকে কিউই পেসারদের বেশ দেখেশুনে খেলতে থাকে দুই আফগান ওপেনার হজরতউল্লাহ জাজাই ও নূর আলী জাদরান। 

ইনিংসের প্রথম ওভারেই তিনটি চার মারেন আফগান গেইল হিসেবে পরিচিত জাজাই। এরপর সিঙ্গেলস এবং ডাবলস নিয়ে দেখে শুনে বোল্ট ও হেনরিকে খেলতে থাকেন দুই ওপেনার। ৯ম ওভারে আবারো সেই হেনরির উপর চড়াও হন জাজাই। ৮৯ মিটারের একটি ছক্কা হাঁকিয়ে বলই হারিয়ে ফেলেন তিনি। 

 

প্রথম ১০ ওভারে কোনো উইকেট না হারিয়ে ৬১ রান তোলা আফগানরা যখন বড় স্কোরের চোখ রাঙানি দিচ্ছল তখনই নিশামকে বোলিংয়ে আনেন অধিনায়ক উইলিয়ামসন। ১১তম ওভারের দ্বিতীয় বলে তাকে ৪ মেরে ক্রিজে আমন্ত্রণ জানান নূর আলী জাদরান। কিন্তু এরপরেই শুরু হয় নিশাম ঝড়। তার ওভারে পঞ্চম বলে হজরতউল্লাহ জাজাই উড়িয়ে মারতে গিয়ে সুইপার পয়েন্টে কলিন মুনরোর হাতে ধরা পড়েন। ৩৪ রানের ইনিংসে ১টি ছক্কা ও ৪টি চার মারেন জাজাই। ৬৬ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পরই যেন সবকিছু ওলট পালোট হয়ে যায় আফগানদের। 

১২তম ওভারে লকি ফার্গুসন আরেক ওপেনার নূর আলী জাদরানকে আউট করে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিজেদের হাতে নিয়ে নেয়। এরপরের সময়টায় চলে শুধুই নিশাম শো। কোনো রান না করা রহমত শাহকে নিজের দ্বিতীয় ওভারে গাপটিকের হাতে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট অঞ্চলে ক্যাচ দেয়ার মাধ্যমে প্যাভিলিয়নে ফেরান নিশাম। আফগান অধিনায়ককেও ছাড়েননি এই পেস অলরাউন্ডার। ১৫তম ওভারের প্রথম বলেই গুলবাদাইন নাইবকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে বাড়ি ফেরান তিনি। ৬৬/০ থেকে ৫ ওভারের ব্যবধানে আফগানরা পরিণত হয় ৭০/৪ এ। এমন ব্যাটিং বিপর্যয় খুব কমই দেখা যায়। 

 

নিশামের করা ৫ম ওভার এবং আফগান ইনিংসের ২০ ওভারের পর বৃষ্টি নামলে খেলা কিছুক্ষণ বন্ধ থাকে। প্রায় ২৫ মিনিট পর খেলা আবারো শুরু হয়। তখন আফগানদের দলীয় রান ৪ উইকেট হারিয়ে ৮৪ রান। ২২.২ ওভারের পর আবারো বৃষ্টি নামে ২১ বছর পর কোন আন্তর্জাতিক ম্যাচ হতে যাওয়া টান্টন স্টেডিয়ামে। আবারো দ্বিতীয় অবস্থায় ২৫ মিনিট বন্ধ থাকার পর খেলা শুরু হয়। দুইবার বন্ধ থাকলেও কোনো ওভার হারাতে হয়নি আফগানদের। 

বৃষ্টির পর করা নিজের প্রথম ওভারেই আবার জোড়া আঘাত হানেন নিশাম। আফগান ইনিংসের ২৪তম ওভারের প্রথম বলে শাহিদী ৪ মারেন। তৃতীয় বলেই আফগানদের সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য ব্যাটসম্যান ও অলরাউন্ডার মোহাম্মদ নবীকে উইকেটের পেছনে লাথামের তালুবন্দী করে ফেরান নিশাম। এই ওভারেরই শেষ বলে নাজিবুল্লাহ জাদরানকেও ঠিক একইভাবে লাথামের তালুবন্দী করেন নিশাম। বিশ্বকাপে পেয়ে যান নিজের প্রথম ফাইফার। 

বিশ্বকাপে ৫ম কিউই পেসার হিসেবে ৫ উইকেট নেয়ার গৌরব অর্জন করলেন নিশাম। ১৯৮৩ সালের বিশ্বকাপে রিচার্ড হ্যাডলি ২৫ রানে পেয়েছিলেন ৫ উইকেট, ২০০৩ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২৩ রানে ৬ উইকেট পেয়েছিলেন শেন বন্ড, ২০১৫ সালে ট্রেন্ট বোল্ট ২৭ রানে ৫ উইকেট নেন  অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে এবং ওই বিশ্বকাপেই টিম সাউদি ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৩৩ রানে নেন ৭ উইকেট যা এখন পর্যন্ত কিউইদের বিশ্বকাপে সেরা বোলিং ফিগার। 

নিশামের ৫ উইকেট পাওয়ার দিনে আরেক পেস বোলারও পেয়েছেন সাফল্য। তবে লকি ফার্গুসন পেয়েছেন ৪ উইকেট। নিশাম ভেঙ্গে দিয়েছেন আফগানদের শুরুর ব্যাটিং লাইনআপ। আর ফার্গুসন ভেঙ্গেছেন শেষেরগুলো। তার গতিময় বাউন্সে আফগান ব্যাটসম্যানদের ‘ছেড়ে দে মা কেঁদে বাঁচি’ অবস্থা। রশিদ খানের মাথায় বল লেগে তো তিনি কিছুক্ষণ ঝিম মেরেই ছিলেন। অবশ্য ওই বলের পরের বলেই আউট হন তিনি। কিন্তু আফগানদের জন্য দুঃসংবাদ হয়ে আসে রশিদের মাথায় আঘাত পাওয়ার ব্যাপারটা। আফগানদের হয়ে আর বোলিংও করতে পারেননি এই লেগ স্পিনার। যার দরুণ কিউই ব্যাটসম্যানদের তেমন কোনো বেগ পেতে হয়নি আফগানদের দেয়া ১৭৩ রানের লক্ষ্যকে তাড়া করে জেতা। 

যদিও নিউজিল্যান্ডের ব্যাটিং ইনিংসের শুরুতে কিছুটা ভয় ধরিয়ে দিয়েছিলেন আফগান পেসাররা। গাপটিলক শূন্য রানে এবং মুনরোকে ২২ রানে ফিরিয়ে প্রতিরোধের আভাস দিচ্ছিলন আফগান পেসাররা। কিন্তু কেন উইলিয়ামসন এবং রস টেলরের দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে সেটা আর সম্ভব হয়নি তাদের জন্য। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ৮৯ রান করে ম্যাচ থেকে আফগানদের ছিটকে দেন এই দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যান। টেলর ৪৮ রান করে আউট হলেও উইলিয়ামসন ৭৯ রান নিয়ে অপরাজিত থেকে নিউজিল্যান্ডকে জয়ী করেই মাঠ ছাড়েন।