ভোটে টাকা ছড়াতে গিয়ে গ্রেপ্তার হাওয়া ভবনের সাবেক কর্মী
নিউজ ডেস্ক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৭:২৯ এএম, ২৬ ডিসেম্বর ২০১৮ বুধবার
বিপুল অঙ্কের কালো টাকা ছড়িয়ে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে প্রভাবিত করার অভিযোগে হাওয়া ভবনের সাবেক কর্মীসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। তাঁদের কাছ থেকে জব্দ করা হয়েছে নগদ প্রায় সাড়ে আট কোটি টাকা এবং ১০ কোটি টাকার চেক। মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মতিঝিলের সিটি সেন্টারে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন আমদানি-রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ইউনাইটেড করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আলী হায়দার (২৪), গুলশানের আমেনা এন্টারপ্রাইজের মহাব্যবস্থাপক (জিএম, প্রশাসন) জয়নাল আবেদিন (৪৫) ও অফিস সহকারী আলমগীর হোসেন। এদের মধ্যে জয়নাল আবেদীন হাওয়া ভবনের সাবেক কর্মী। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গত সোমবার রাত থেকে গতকাল দুপুর পর্যন্ত র্যাব-৩-এর একটি দল মতিঝিল সিটি সেন্টারের ২৭ তলায় ইউনাইটেড করপোরেশন ও ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ নামের দুটি প্রতিষ্ঠানে অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার ও টাকা জব্দ করে। তাঁদের কাছ থেকে নগদ আট কোটি ১৫ লাখ ৩৮ হাজার ৬৫১ টাকা জব্দের তথ্য জানিয়েছে র্যাব। এই প্রক্রিয়ার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একসময়ের এপিএস ও আমেনা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মিয়া নুরুদ্দিন আহমেদ অপু, ইউনাইটেড করপোরেশনের স্বত্বাধিকারী মাহমুদুল হাসান ও ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী আতিকুর রহমানকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
মতিঝিলের সিটি সেন্টারের ২৭ তলায় প্রেস ব্রিফিংয়ে বেনজীর আহমেদ ঘটনার বিষয়ে আরো জানান, নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দুই মাস আগে সিটি সেন্টারে এই দুটি অফিস ভাড়া নেওয়া হয়। এরপর গত দুই মাসে এই অফিস থেকেই প্রায় দেড় শ কোটি টাকা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাঠানো হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা টাকা ছড়িয়ে নির্বাচনকে প্রভাবিত করতে চেয়েছিলেন জানিয়ে র্যাব ডিজি বলেন, একাদশ সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে এরই মধ্যে ১৪০ কোটি কালো টাকা হুন্ডির মাধ্যমে দুবাই থেকে বাংলাদেশে এসেছে। এসব কালো টাকা একটি গোষ্ঠীর পক্ষে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সম্প্রতি শরীয়তপুর-৩ আসনের প্রার্থী মিয়া নুরুদ্দীন অপুকে তিন কোটি ৬০ লাখ টাকা পাঠানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখেছি, ওই অঞ্চলে টাকা যাওয়ার পর ওখানকার নির্বাচনী দৃশ্যপট পরিবর্তন হয়েছে। এ ছাড়া ইউনাইটেড করপোরেশনের কথিত মালিক মাহমুদ হাসানের অ্যাকাউন্টে এক মাসে ৭৩ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। কালো টাকার মাধ্যমে নির্বাচন প্রভাবিত করাই ছিল তাঁদের উদ্দেশ্য। এ ছাড়া এই অফিস থেকে কোনো দিন ১১ কোটি টাকা, কোনো দিন ২০ কোটি টাকার লেনদেন হয়েছে। তবে এই অফিসের লোকজন টাকার রেকর্ড বেশিদিন রাখে না। তাই আমরা সব তথ্য পাইনি।’ জব্দ করা যন্ত্রাংশগুলোর ফরেনসিক টেস্টের পর লেনদেনের বিষয়ে বিস্তারিত জানা যাবে বলে জানান তিনি।
ইউনাইটেড করপোরেশন, ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ ও আমেনা এন্টারপ্রাইজের মাধ্যমে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ আনা হয়েছে দাবি করে র্যাবের ডিজি জানান, নির্বাচনে কালো টাকা ছড়াতে মতিঝিলে ইউনাইটেড করপোরেশন ও ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজ নামে অফিস খোলা হয়। এর আগে এই দুটি অফিস একটি বড় রাজনৈতিক দলের অফিসের পাশে ছিল। নিরাপত্তার কারণেই অফিস সরিয়ে এখানে নিয়ে আসা হয় এবং এখানে এসে কাজ শুরু করে তারা। সিটি সেন্টারের ইউনাইটেড করপোরেশনের মালিক দুবাইপ্রবাসী মাহমুদুল হাসান। ওই ভবনের একই ফ্লোরে থাকা ইউনাইটেড এন্টারপ্রাইজের মালিক আতিকুর রহমান ঝালকাঠি উপজেলার ছাত্রদলের সহসভাপতি। আমেনা এন্টারপ্রাইজের মালিক অপু।
ব্রিফিংয়ে আরো জানানো হয়, কালো টাকার মাধ্যমে শুধু নির্বাচনকে প্রভাবিত ও প্রশ্নবিদ্ধ করাই নয়, পেশিশক্তির মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতেই টাকাগুলো ব্যবহার করা হতো।
ঢাকার একটি আসনের সব ভোটারের নামসংবলিত একটি তালিকাও আলী হায়দারের (ইউনাইটেড করপোরেশনের এমডি) অফিসে পাওয়া গেছে জানিয়ে ব্রিফিংয়ে র্যাবের ডিজি বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘এর মানে কী? এর মাধ্যমে বিশালসংখ্যক ভোটারকে কেনার পরিকল্পনা করেছিল তারা। কালো টাকা দিয়ে ভোট কিনে যদি কেউ এ দেশের ক্ষমতায় আসে তাহলে দেশের অর্থনীতির কী অবস্থা হবে তা সহজেই অনুমেয়।’
ব্রিফিংয়ে আটককৃতদের রাজনৈতিক পরিচয় জানতে চাইলে র্যাবের ডিজি বলেন, আটক একজন বিশেষ ভবন তথা হাওয়া ভবনে কাজ করতেন।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক সহসভাপতি, সাবেক কেন্দ্রীয় নেতা অপু একসময় খালেদা জিয়ার ছেলে তারেকের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করতেন। এবার তাঁকে শরীয়তপুরে ধানের শীষের প্রার্থী করার পর স্থানীয় বিএনপি আপত্তি তোলে। গত সোমবার ফরিদপুরের গোসাইরহাটে নির্বাচনী প্রচারের সময় সংঘর্ষে আহত হন অপু। তাঁর দাবি, আওয়ামী লীগের সমর্থকরা তাঁর ওপর হামলা চালায়। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের দাবি, বিএনপির অভ্যন্তরীণ কোন্দলের কারণে সংঘর্ষ বাধে। ঢাকায় উদ্ধার হওয়া বিপুল অর্থের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের বিষয়ে নূরুদ্দীন অপুর কোনো প্রতিক্রিয়া তাত্ক্ষণিকভাবে পাওয়া যায়নি।
উল্লেখ্য, আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করে আসছেন, আসন্ন নির্বাচন প্রভাবিত করতে লন্ডনে বসে ষড়যন্ত্র করছেন তারেক। এ জন্য তাঁকে বিপুল পরিমাণ অর্থ দিয়েছে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই।
