বুধবার   ২৪ ডিসেম্বর ২০২৫   পৌষ ১০ ১৪৩২   ০৪ রজব ১৪৪৭

পচা পেঁয়াজে আগুন দিয়ে সরকারকে বিপাকে ফেলার চেষ্টা

নিউজ ডেস্ক

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৯:৪২ এএম, ৩০ মে ২০১৯ বৃহস্পতিবার

পাবনার সুজানগর উপজেলার বারভাগিয়া গ্রামের কয়েক যুবক পচে যাওয়া কিছু পেঁয়াজে আগুন দিয়ে ভিডিও করেন। এরপর পূর্ব পরিকল্পনামতে সেই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেন। দ্রুতই এটা ভাইরাল হয়ে যায়।

এটাকে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার ষড়যন্ত্র বলে আখ্যায়িত করে স্থানীয় এক আওয়ামী লীগ নেতা তাদের বিরুদ্ধে সুজানগর থানায় মামলা করেছেন। পুলিশ এরইমধ্যে দুইজনকে আটক করেছে। আটককৃতরা হলেন- বারভাগিয়া গ্রামের রপু বিশ্বাস ও রন্টু বিশ্বাস। তাদের দাবি নায্যমূল্য না পেয়েই ক্ষুব্ধ হয়ে এমনটি করেছেন। তবে পুলিশ ও স্থানীয়রা বলছেন সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করাই ছিল তাদের মূল উদ্দেশ্য।

ছড়িয়ে পড়া ভিডিওটিতে দেখা যায়, অল্পবয়সী ও মধ্যবয়সী কয়েকজন গ্রামবাসী বারভাগিয়া গ্রামের রাস্তায় কিছু পেঁয়াজ ছড়িয়ে দেন। তারপর খড় বিছিয়ে দিয়ে এতে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেন। এদের নাম পরিচয় জানা যাচ্ছিল না। তবে এদের ভাষা পাবনার সুজানগর- সাঁথিয়া এলাকার হওয়ায় ওই অঞ্চলে সরকারি বিভিন্ন সংস্থা ও গণমাধ্যমকর্মীরা অনুসন্ধান শুরু করে। পরে এদের নাম- পরিচয় ও ঘটনার আদ্যপ্রান্ত জানা যায়।

সুজানগর থানার ওসি অরবিন্দ সরকার জানান, তারা অনুসন্ধান চালিয়ে জানতে পারেন ঘটনাটি ঘটেছে উপজেলার হাটখালি ইউনিয়নের বারভাগিয়া গ্রামে।

তিনি স্থানীয়দের বরাত দিয়ে জানান, ঘরের মাচায় রাখা স্বাভাবিকভাবে পচে যাওয়া কিছু পিঁয়াজ দিয়ে এই আগুন নাটকটি সাজানো হয়। সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার জন্য এবং এ ‘সরকার কৃষিবান্ধব নয়’ তা প্রমাণের জন্য কতিপয় ব্যক্তি পরিকল্পিতভাবে কাজটি করেছেন।

ওসি আরো জানান, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা রিয়াজ উদ্দিন ভিডিওটি তৈরি ও আপলোডকারীদের বিরুদ্ধে থানায় মঙ্গলবার একটি মামলা করেছেন। মামলার বাদি রিয়াজ উদ্দিন হাটখালি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য এবং হাটখালি গ্রাম কমিটির সভাপতি। তিনি জানান, তিনি প্রথমে ইউটিউবে ভিডিওটি দেখেন। পরে ওই গ্রামে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন বাড়ির কিছু পচা পেঁয়াজে আগুন লাগিয়ে অপরাধমূলক কাজটি করা হয়েছে। ঘটনার সঙ্গে জড়িতরা বহু আগে থেকেই আওয়ামী লীগ সরকারের বিরোধী। বর্তমান সরকারের উন্নয়ন দেখে তারা দিশেহারা হয়ে নিজেরা বা কারো উস্কানিতে এমন কাজ করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এজন্য তাদের শাস্তি চেয়ে মামলাটি করেছেন।
 
পাবনার বনগ্রাম হাটের আড়ৎদার ইব্রাহিম হোসেন জানান, ভিডিওটি দেখেছি। তার দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতার আলোকে জানান - হাটে এসে কেউ দাম না পেলে সেই পণ্য কখনো ফেলে দেয়না। আর বাড়ির মাচা থেকে কেউ ফসল পোড়ায় না।

পাবনা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের পরিচালক আজাহার আলী জানান, পাবনার সুজানগর উপজেলা দেশের সবচেয়ে পেঁয়াজ প্রধান এলাকা। তিনি উদাহরণ দিয়ে বলেন, সুজানগরের অনেক গ্রামে এই পাঁচ বছর আগেও যে ছিল ভ্যান চালক, নিঃস্ব ভূমিহীন পেঁয়াজ চাষ করে তারা এখন সংসারে স্বচ্ছলতা এনেছেন।  হয়েছেন জমির মালিক।

তিনি বলেন, এ উপজেলার বামনদি, শান্তিপুর বা পাইকপাড়া গ্রামে বহু চাষি শূণ্য থেকে শুরু করে পেঁয়াজ চাষ করে আজ সফল। তিনি বলেন, পেঁয়াজ চাষ করে দিন মজুরেরা হয়েছেন লাখপতি আর অনেক মধ্যবিত্ত কোটিপতি হওয়ার পথে! অথচ সেই লাভজনক ফসলটিকে কিছু লোক নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করছেন। তিনি আরো বলেন, এবার বিঘাপ্রতি পেঁয়াজের ফলন হয়েছে ৭০-৯০ মন। তাই বাজার মূল্য মনপ্রতি ৭-৮ শ’ টাকা থাকলেও তা লাভজনক। এখন পাইকারি বাজারদর মনপ্রতি সাড়ে আটশ- নয়শ’ টাকা। অসৎ উদ্দেশ্য ছাড়া কোন পাগলও পেঁয়াজ পুড়িয়ে দেবে না।

সুজানগর উপজেলার বেশ কিছু পেঁয়াজ চাষির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবহাওয়াগত কারণে ও সুষ্ঠুভাবে সংরক্ষণের অভাবে কিছু পেঁয়াজ স্বাভাবিকভাবেই পচে যায়। আবার শিলাবৃষ্টির কারণেও কিছু পেঁয়াজ পচে যায়। এর সঙ্গে সরকারের নীতির কোনো সর্ম্পক নেই। পেঁয়াজের দাম এত কমেনি যে তা পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

কৃষি তথ্য সার্ভিসের পাবনার আঞ্চলিক কর্মকর্তা এটিএম ফজলুল করিম জানান, প্রায় বছরই শেষ প্রান্তিকে এসে পেঁয়াজের দাম অনেক হয়। এতে চাষি ব্যাপক লাভবান হন। আর পেঁয়াজ চাষে ও ফলনে জেলার সবচেয়ে সুফলভোগী হলেন সুজানগর উপজেলার চাষিরা। তাই তারা পেঁয়াজ ফেলে দিতে পারেন না। এটা অস্বাভাবিক ঘটনা।

সুজানগর উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীনুজ্জামান শাহীন জানান, তিনি ভিডিওটি দেখেছেন। খোঁজ নিয়ে জেনেছি এটা সরকারবিরোধী কিছু লোকের ষড়যন্ত্র। এদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।

এদিকে ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের কাউকে বাড়ি পাওয়া যায়নি। তবে এক আসামির আত্মীয় ( নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান, তাদের নাকি ধারণা ছিল ধানের ক্ষেতে আগুন দিলে যদি ধানের দাম বাড়ে তবে পেঁয়াজে আগুন দিলে সরকার এর দাম বাড়াবে। এজন্য তারা আগুন দিয়ে ফেঁসে গেছে।

সুজানগর থানার ওসি জানান, থানায় মামলা হয়েছে। ইতোমধ্যে দুইজনকে আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও তদন্ত চলছে।