রোববার   ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫   আশ্বিন ৫ ১৪৩২   ২৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

ঘুরে আসুন সিলেটের স্বর্গস্থান বিছানাকান্দি

নিউজ ডেস্ক

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৭:৫১ পিএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার

স্বচ্ছ জলধারা। নীল আকাশ আর থরে থরে বিছানো পাথর। দূরে দিগন্ত বিস্তৃত সবুজ পাহাড়ের হাতছানি। এসব কিছুর মেলবন্ধনেই অপরূপ সিলেটের বিছানাকান্দি। হ্যাঁ, সিলেটের স্বর্গ বিছানাকান্দি। সীমান্তের ওপার থেকে বয়ে আসা স্বচ্ছ জলধারা আর পাথরের মায়াজালে যেখানে হারিয়ে যাবেন নিমিষেই। স্বচ্ছ স্রোতধারায় দাঁড়িয়ে উপভোগ করতে পারবেন অন্য এক রাজ্য। যেখানে মেঘ, পাহাড় আর জলধারার মিতালী আপনাকে আপন করবে গভীর মমতায়।

সিলেট জেলায় রয়েছে বেশ কয়েকটি নজরকাড়া স্থান। তার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে সিলেটের বিছানাকান্দি। সিলেট শহর থেকে বেশ দূরের পথ বিছানাকান্দি। সিলেট জেলার গোয়াইনঘাট উপজেলায় অবস্থিত এটি। অনেকে একে বলে থাকেন সিলেটের স্বর্গ। এযেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক অনন্য লীলাভূমি। থরে থরে সাজানো পাথরের উপর দিয়ে বয়ে চলে বাংলাদেশ সীমান্তে মেঘালয় পাহাড় থেকে নেমে আসা ঠান্ডা পানির স্রোত। তবে বিছানাকান্দি ঘোরার উত্তম সময় হচ্ছে বর্ষাকাল। তখন পানির প্রবাহ থাকে এবং এর প্রকৃত সৌন্দর্য উপভোগ করা যায়। সবুজ পাহাড় আর পাথরের উপর দিয়ে বয়ে চলা পানির স্রোতের এক অপরূপ মিলনমেলা। যতদূর চোখ যায় শুধু স্বচ্ছ পানি, পাথর আর পাহাড়। এই পর্যটন এলাকাটি থেকে মূলত পাথর সংগ্রহ করা হয়। আসে পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে অজস্র পাথর। দেখে মনে হয় যেন পুরো জায়গাটায় পাথর বিছানো।

স্বচ্ছ পানিতে নীল আকাশের ছায়া এক অন্যরকম রোমাঞ্চ তৈরি করে। শান্ত পাহাড়, আকাশে রোদ আর মেঘের লুকোচুরি, মনে এক অন্যরকম প্রশান্তি এনে দিবে, দূর করবে সব ক্লান্তি। অপার সৌন্দর্য ঘেরা প্রকৃতির কোলে একাকী কিছু সময় কাটানোর জন্য উপযুক্ত জায়গা হচ্ছে বিছানাকান্দি।

বিছানাকান্দির পাশে আরেকটি সুন্দর জায়গা হচ্ছে পান্থমাই। এটা বিছানাকান্দি যাওয়ার আগেই পরবে। পান্থমাই ঝর্ণার অবস্থান ভারতে হলেও এর সৌন্দর্য বাংলাদেশ থেকে উপভোগ করা যায়। আর এর পানি পাথরের ঢল বেয়ে বাংলাদেশে প্রবাহিত হয়। এর অভাবণীয় সৌন্দর্য যেকোন মানুষকে মুগ্ধ করবে। ঝর্ণা থেকে গড়িয়ে পড়া পানিতে তৈরি হয়েছে ছোট নদি, স্থানীয়রা যাকে ছড়া বলে। পান্থমাই ঝর্ণার পানি বেশ গর্জন করতে করতে প্রবাহিত হয়। ছোঁয়া না গেলেও এই ঝর্ণার দর্শনই বেশ উপভোগ্য। মেঘালয় পাহাড়ের বুকে হেলান দিয়ে থাকা পান্থমাই গ্রামের চারপাশটাও বেশ সুন্দর।


যেভাবে যাবেন: ঢাকা থেকে সিলেটে ট্রেনে বা বাসে করে যেতে পারেন। সিলেট শহর হতে প্রায় ৬০ কিলোমিটার উত্তর পূর্বে গোয়াইনঘাট উপজেলার রস্তমপুর ইউনিয়নে বিছানাকান্দি গ্রাম। সিলেটের আম্বরখানা থেকেও যাওয়া যায় আলাদাভাবে। সেখানে প্রতি সিএনজিতে চারজন করে নেওয়া হয় হাদার বাজার পর্যন্ত। ভাড়া জনপ্রতি ৮০ টাকা। তবে শহরের আম্বরখানা থেকে সিএনজি নিলে সহজে এবং কম খরচে বিছানাকান্দি যাওয়া যায়। বাজারের পাশেই খেয়াঘাট। ঘাট থেকে নৌকা রিজার্ভ করে যাওয়া যায় বিছানাকান্দি। তবে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার নজির কমবেশি চোখে পড়বে। তাই আগে থেকেই এখানকার ভাড়া জেনে নিয়ে যেতে পারেন। নৌকায় যেতে যেতে দেখতে পাবেন দু'পাশে সবুজ গ্রামের প্রতিচ্ছবি। এর সঙ্গে দূরে মেঘালয়ের পাহাড়গুলো মিলেমিশে যেন একাকার। মেঘ-পাহাড়ের মিতালী দেখে অবাক হবেন যে কেউই। মনে হতে পারে কল্পনার মানসপটে আঁকা ছবি। ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে যেতে সর্বোচ্চ সময় লাগবে ২০ মিনিট।

কোথায় থাকবেন:
পর্যটনকে ঘিরে সিলেট শহরে গড়ে উঠেছে অনেক উন্নতমানের হোটেল। বিছানাকান্দিতে দিনে গিয়ে দিনে ফেরা যায় সিলেট শহর থেকে। তাই সিলেট শহরেই থাকতে পারেন। এখানকার অভিজাত হোটেল-রেস্টুরেন্টের ভাড়া পড়বে ৩০০ থেকে শুরু করে ৩০০০ টাকা পর্যন্ত। নিরাপত্তাও ভালো আছে হোটেলগুলোতে। দরগা গেটে আরও কয়েকটি ভালো হোটেল রয়েছে। এছাড়া নলজুড়ি উপজেলা সরকারি ডাকবাংলোতেও রাত কাটাতে পারেন। এ জন্য পূর্ব অনুমতি থাকতে হবে। সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য রুম প্রতি ভাড়া ৫০০ টাকা। আর সাধারণের জন্য ১৫০০ টাকা।