রোববার   ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫   আশ্বিন ৫ ১৪৩২   ২৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

গৃহিণী’নাকি ‘কর্মজীবী’নারী? সমাজ কি চায়?

নিউজ ডেস্ক

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৭:৪১ পিএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার

গৃহিণী’ একটা মিশ্র অনুভূতির শব্দ। সংসারের প্রতি ভলোবাসা থেকে যেমন এটাকে অনেকে পেশা হিসেবে বলতে কুন্ঠাবোধ করেন না একইভাবে কখনো বা পরিবারের চাপে, কখনো বা সুযোগের অভাবে গৃহিণী হয়ে ওঠাটা কারো কারো জন্য হয়ে যায় স্বপ্নভঙ্গেরই নামান্তর।

আমার মায়েদের মত মেয়েদের এই সমাজকে যা যা বলতে দেখেছি –

– “সারাদিন বাসায় বসে বসে করটা কী?”

– “সারাদিন তো বাসাতেই থাক! তোমার বাচ্চার জামায়ও দেখি এত ময়লা!”

– “এত পড়াশোনা করে কী লাভটাই বা হইল, হইছো তো হাউজ ওয়াইফ!”

– “পড়াশোনা করছো কি অন্যের ঘরের চুলা ঠেলার জন্যে! এই জন্যেই বুঝি বাপ-মা টাকা পয়সা খরচ কইরা পড়াইছে তোমারে?”

– “বাচ্চা পালার জন্যে চাকরি ছাড়বা? বলে কি এই মেয়ে? স্বামীর ঘাড়ে বসে বসে খাইলে কোন পাত্তা পাবা ভাবছো?”

– “তোমার বেস্ট ফ্রেন্ডটাকেই দেখো কি সুন্দর চাকরি-বাকরি করছে, দেশ-বিদেশে ঘুরছে! সেইরকম আছে! তোমার এই হাল কেন?”

(……..এবং তারা এভাবেই বলে চলেন…….)


মানুষজন কীভাবে কীভাবে যেন কল্পনায় দেখতে পারে- নিশ্চিত বাসায় কাজের বুয়া বাচ্চা পালছে আর বাচ্চাটাকে ধরে ধরে পিটাচ্ছে! অথবা মেয়ের নিজের মা/শ্বাশুড়ি বাচ্চাটাকে পেলে দিচ্ছে আর ওদিকে মহিলা অফিসে গিয়ে আরাম চেয়ারে বসে বসে দোল খাচ্ছে! আর দুইজন পাখা দিয়ে মহারাণীকে বাতাস করছে!!

আমার ‘গৃহিণী’ মায়ের এইসব ‘কর্মজীবী’ মেয়েরা যেসব কথা শোনেন এই সমাজের কাছ থেকে –

– “মা হয়ে বাচ্চাটারে একা ফেলে ক্যামনে যে, অফিসে যাও তুমি? কে দেখে? আমি হলে জীবনেও বাচ্চাকে অন্য কারো কাছে দিতাম না! জন্মের পর থেকে এক হাতে পালছি! কাউরে ধরতে পর্যন্ত দেই নাই!!”

– “ওহ! তোমার মা/শ্বাশুড়ি বাচ্চা পেলে দেয়! ভালই আরাম করে নিলা! কপাল করে আসছো!!”

– “বাচ্চা ব্রেস্টফিড করে নাই! এইটাতো বাচ্চার হক! আচ্ছা শুনছি এরকম হইলে নাকি বাচ্চার কাছে বড় হইলে মাফ চাইতে হয়!কথা কি সত্যি?”

– “কি বলেন এইসব? বাচ্চাকে ফেলে ওর মা অফিসের ট্যুরে গেছে? (যাক নিশ্চিত হওয়া গেল! এই মেয়ে নিশ্চিত একটা জালিম বা একটা ডাইনী!!)”

– বিয়ে বাড়িতে, “এ কি? তুমি দেখি আগেই খেতে বসে গেছো? বাচ্চাকে কে খাওয়াচ্ছে? কী? বাচ্চার বাবা? কী কান্ড, কী কান্ড?” (বাস্তবে সুযোগ থাকলে হিন্দী সিরয়াল এর ক্লাইমেক্স-এর সাউন্ডগুলা বেশ জমতো এখানে!!)

(……..এবং তারা এভাবেই বলে চলেন….)

এসব অপ্রয়োজনীয় কথা বা একটু নোংরা করে বললে ‘খোঁটা বাণিজ্য’ যে কী ভয়াবহ আইডেন্টিটি ক্রাইসিস-এ একজন নারীকে ফেলে দিতে পারে সেসব নিয়ে আমরা সচরাচর খুব কম কথা বলি! কারণ খুব যত্ন করে নিজেদের কষ্টগুলো আমরা লুকাতে শিখি! ‘গৃহিণী’ হবেন বলে যিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বা হতে বাধ্য হয়েছেন, তিনি হয়তো রোজকার ব্যস্ত দিনশেষে চায়ের মগ হাতে আনমনা হন। ভাবতে শুরু করেন – “ভুল করলাম না তো?”

সমাজ কে চিৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে- “কান্নাটা শুনতে পাচ্ছোতো ঠিকঠাক? এখন খুশি তুমি? এবার কী তবে বলবে, মুক্তিটা কোথায়?”