জনসন এন্ড জনসন বেবি পাউডা ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ক্ষতিকর অ্যাসবেসটস
নিউজ ডেস্ক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৬:৫৪ পিএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার

আন্তর্জাতিক প্র্রসাধনী সামগ্রী উৎপাদনকারী জনসন এন্ড জনসনের বেবি পাউডারে ক্যান্সার সৃষ্টিকারক ক্ষতিকর উপাদান অ্যাসবেসটস রয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে দেখবে বাংলাদেশ। গতকাল শুক্রবার বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এই তথ্য জানিয়েছে।
শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত বিএসটিআই জানায়, এই পরীক্ষা দেশে কিংবা দেশের বাইরে হতে পারে। বিএসটিআই প্ররিচালক এস এম ইসহাক আলি রয়টার্সকে বলেন, আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। কয়েক দিনের মধ্যেই বাজার থেকে আমরা নমুনা সংগ্রহ করব। তবে বেবি পাউডারে অ্যাসবেসটস পাওয়ার আগ পর্যন্ত পণ্যটি বাজারজাতকরণ বন্ধ করবে না বাংলাদেশ।
বিএসটিআই’র এই পদক্ষেপের বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারতে জনসন অ্যান্ড জনসন মুখপাত্রদের প্রতিক্রিয়া জানাতে পারেনি রয়টার্স। তবে বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে কোম্পানিটি জানিয়েছে, তাদের উৎপাদিত ট্যালকম পাউডার নিয়মিতই সরবরাহকারী ও স্বতন্ত্র পরীক্ষাগারে পরীক্ষা করা হয় অ্যাসবেসটস মুক্ত কিনা তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য। ভারতে উৎপাদিত ট্যালকম পাউডার দেশটিসহ প্রতিবেশী শ্রীলঙ্কা, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপে বিক্রি হয় এবং তা ভারত সরকারের নিয়ন্ত্রক সংস্থার নির্ধারিত মান নিশ্চিত করে।
গত শুক্রবার রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানায়, বেবি ও ট্যালকম পাউডারে ক্যান্সার সৃষ্টিকারী ক্ষতিকর অ্যাসবেসটসের উপস্থিতির কথা কয়েক দশক ধরেই জানত জনসন অ্যান্ড জনসন। প্রতিষ্ঠানটি এই প্রতিবেদনকে ভুয়া ও একপাক্ষিক বলে আখ্যায়িত করেছে।
জনসন অ্যান্ড জনসনের পণ্য ব্যবহারের কারণে ক্যান্সার হওয়ার দাবি করে সম্প্রতি কোম্পানিটির বিরুদ্ধে কয়েক হাজার অভিযোগ দায়ের করা হয়। এসব অভিযোগের প্রেক্ষিতে অনুসন্ধান চালায় রয়টার্স। আদালতে উত্থাপন করা কোম্পানির বিভিন্ন নথি পর্যালোচনা করে বার্তা সংস্থাটি দেখতে পায়, অন্তত ১৯৭১ সাল থেকে নিজেদের উৎপাদিত পাউডারে অ্যাসবেসটস থাকার কথা জানতো প্রতিষ্ঠানটি। ওই সময় থেকেই শনাক্তযোগ্য পরিমাণ অ্যাসবেসটসের উপস্থিতির বিষয়ে নিশ্চিত ছিল তারা।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক বহুজাতিক এই কোম্পানির বেবি সোপ, লোশন, পাউডারসহ বিভিন্ন পণ্য বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়। অনেক বাবা-মা নিরাপদ মনে করেই তাদের সন্তানদের জন্য এসব পণ্য ব্যবহার করেন।
যুক্তরাষ্ট্রে জনসন অ্যান্ড জনসনের ট্যালকম পাউডার ব্যবহার করে ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছেন বেশ কয়েক জন নারী। এরপর তারা প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করেন। ওই মামলার রায়ে আদালত গত জুলাইয়ে ২২ নারীকে ৪৭০ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দেন।
ওই নারীরা আদালতে অভিযোগ করেন, বিগত কয়েক দশক ধরে জনসন অ্যান্ড জনসনের বেবি পাউডার ও অন্যান্য পণ্য ব্যবহার করায় তারা এ রোগে আক্রান্ত হয়েছেন। অভিযোগকারী ২২ নারীর মধ্যে ছয় জন ইতোমধ্যেই মারা গেছেন।
জনসন অ্যান্ড জনসনের বিরুদ্ধে এ ধরনের আরও অন্তত নয় হাজার মামলা রয়েছে যুক্তরষ্ট্রের বিভিন্ন আদালতে।
গত সপ্তাহে রয়টার্সের এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭১ থেকে ২০০০ সালের মধ্যে বেশ কয়েক দফা পরীক্ষায় অ্যাসবেস্টসের উপস্থিতি ধরা পড়লেও তা গোপন করে বিক্রি চালিয়ে গেছে জনসন অ্যান্ড জনসন।
রয়টার্সের ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ভারতের মহারাষ্ট্রের ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সেখানে জনসন অ্যান্ড জনসনের কারখানা থেকে বেবি পাউডারের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠায়। ভারতে উৎপাদিত ওই ট্যালকম পাউডার বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপেও বিপণন করা হয়।
এদিকে জনসন অ্যান্ড জনসন রয়টার্সের ওই প্রতিবেদনকে ‘একতরফা, মিথ্যা ও রঙ চড়ানো’ বলে আখ্যায়িত করেছে।