পরিকল্পনায়’ বন্দি সাঁতার
নিউজ ডেস্ক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১০:১৭ এএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার
বাংলাদেশের মাহফিজুর রহমান সাগর, ভারতের সজন প্রকাশ ও শ্রীলংকার চেরান্থা ডি সিলভা ভালো বন্ধু। বিশ্ব সাঁতার সংস্থার (ফিনা) বৃত্তি নিয়ে একই ক্যাম্পে থাকা দুই প্রতিবেশী দেশের সাঁতারুর চেয়ে প্রতিভায় কোনো অংশে পিছিয়ে ছিলেন না সাগর। ভারত ও শ্রীলংকার সাঁতার কাঠামোর কারণে সজন ও চেরান্থা ব্যাপক উন্নতি করেছেন, সাগরের ভাগ্যে সেটা জোটেনি। তরুণ প্রতিভা থাকার পরও কেন পিছিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ? এ প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য সে প্রশ্নের উত্তর খোঁজা।
ভারত ও শ্রীলংকানদের সাঁতার শুরু হয় ১০-১২ বছর বয়স থেকে। বাংলাদেশও একই বয়স বিভাগে খেলা শুরু করে। দুই প্রতিবেশী দেশের অধিকাংশ সাঁতারুর হাতেখড়ি স্কুল ও ক্লাব প্রতিযোগিতা দিয়ে। স্কুল ও ক্লাব পর্যায়ের কার্যক্রমের সঙ্গে দেশ দুটির সাঁতার সংস্থা সমন্বিতভাবে কাজ করে।
বাংলাদেশে সাঁতারুদের কার্যক্রম শুরু হয় বিকেএসপির ছাত্র অথবা আনসারের চুক্তিভিত্তিক খেলোয়াড় হিসেবে। পাশাপাশি ক্লাব পর্যায়েও কিছু কার্যক্রম চলে। বিকেএসপি, আনসার ও ক্লাব পর্যায়েই তরুণ প্রতিভার পরিচর্যা হয়। এখানে প্রত্যক্ষ কোনো ভূমিকা নেই দেশের সাঁতার সংস্থার; খেলাটির উন্নয়নে নেই সংস্থাগুলোর সঙ্গে ফেডারেশনের সমন্বয়ের উদ্যোগও।
শুরুর দিকটায় প্রতিবেশী দুই দেশের সাঁতারুদের সঙ্গে বাংলাদেশীদের খুব বেশি তারতম্য থাকে না। দূরত্ব বাড়তে শুরু করে বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষার পর ১৭-১৮ বছর বয়সে বিকেএসপি ছাড়েন অধিকাংশ ডিসিপ্লিনের ক্রীড়াবিদের মতো সাঁতারুরাও। অন্যদিকে ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা ও উন্নত সুযোগ-সুবিধার জন্য ক্লাব ও আনসার ছেড়ে অন্যান্য সংস্থায় পাড়ি দেন উদীয়মান সাঁতারুরা।
ভারত ও শ্রীলংকার সাঁতারুরা ওই বয়সে অভ্যন্তরীণ নানা প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত থাকেন। এশিয়ান বয়সভিত্তিক, দক্ষিণ এশিয়ান বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতায় খেলে নিজেদের পরিণত করেন। পরবর্তীতে তাদের বিশ্বকাপ সাঁতারেও নিয়মিত খেলানো হয়। সংশ্লিষ্ট ক্লাব, সংস্থা ও দেশের সাঁতার সংস্থার পরিকল্পিত কার্যক্রমের সুবিধা নিয়ে ভারত ও শ্রীলংকার সাঁতারুরা আসরগুলো খেলেন।
বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশনের সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা না থাকায় ক্যারিয়ারের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এসে দিকনির্দেশনার অভাবে ভোগেন এ দেশের সাঁতারুরা। তাদের চর্চা ও উন্নতির একমাত্র জায়গা হয়ে দাঁড়ায় নিজ নিজ সংস্থা। অভ্যন্তরীণ প্রতিযোগিতা বলতে জাতীয় সাঁতার প্রতিযোগিতা। ক্লাব পর্যায়ে কোনো প্রতিযোগিতা নেই। এ অবস্থার মধ্যে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর নিয়মিত কার্যক্রমে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক হওয়ায় জাতীয় দলের হয়ে কমনওয়েলথ গেমস, এশিয়ান গেমস, এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ অলিম্পিক গেমসের মতো আসরে খেলার সুযোগ জুটে।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে যা উৎসাহব্যঞ্জক না হয়ে বরং চরম অসহায় করে। বিশ্বমঞ্চে সেরাদের ভিড়ে বাংলাদেশী অ্যাথলিটদের নৈপুণ্য মোটেও উল্লেখ করার মতো থাকে না। ফলে ইভেন্টের পর মুখ লুকানোর জায়গা খোঁজেন এ দেশের অ্যাথলিটরা! সাঁতারুদের ক্ষেত্রেও দৃশ্যটা ব্যতিক্রম হয় না। এভাবেই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উদ্যম হারান বাংলাদেশী সাঁতারুরা। যাদের নিয়ে আলোচনা, জানা যাক সেই সাঁতারুরা এ বিষয়ে কী ভাবেন?
‘কমনওয়েলথ গেমস, এশিয়ান গেমস, এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ, বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ, অলিম্পিকে সেরাদের অংশগ্রহণ থাকে। সে তুলনায় এশিয়ান বয়সভিত্তিক সাঁতার ও বিশ্বকাপ সাঁতারে সেরাদের উপস্থিতি কম থাকে। ভারত ও শ্রীলংকা কিন্তু এখানে নিয়মিত সাঁতারু পাঠায়। শুরুর দিকে সাফল্য না পেলেও দেশ দুটি কিন্তু এখন নিয়মিত সাফল্য পাচ্ছে’— বণিক বার্তাকে বলছিলেন সদ্যই বিশ্ব চ্যাম্পিয়নশিপ খেলে আসা সাঁতারু মাহফিজুর রহমান সাগর।
ফেডারেশন কর্মকর্তাদের ভাষ্যমতে, ক্যারিয়ারের মধ্যগগনে এসে সাঁতারুদের অনিশ্চয়তার কালো মেঘে ঢেকে যাওয়ার প্রধান কারণ আর্থিক দৈন্য। এ সম্পর্কে বাংলাদেশ সাঁতার ফেডারেশনের যুগ্ম সম্পাদক আবদুল হামিদ বলেছেন, ‘অন্যান্য ক্রীড়া ফেডারেশনের মতো আমাদেরও আর্থিক সংকটের মধ্য দিয়ে চলতে হয়। তাই চাইলেই যেকোনো দেশের প্রতিযোগিতায় সাঁতারু পাঠাতে পারি না। প্রতিবেশী কোনো দেশে প্রতিযোগিতা হলে আমাদের কাজটা অনেক সহজ হয়।’
এ কোচ যোগ করেন, ‘প্রতিভা অন্বেষা কার্যক্রমে বেশকিছু প্রতিভাবান সাঁতারু উঠে এসেছে। তাদের পরিপূর্ণ বিকাশে নিয়মিত প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ জরুরি। সীমাবদ্ধতার মাঝেও যতটা সম্ভব আন্তর্জাতিক আসরে তাদের খেলানোর পরিকল্পনা আছে।’
সে পরিকল্পনা কি ফাইলবন্দি থাকবে, না আদৌ আলোর মুখ দেখবে? উত্তরটা সময়ই দেবে।
