মোবাইল ব্যাংকিং বন্ধ ও ইন্টারনেটের গতি কমানোর প্রস্তাব ইসিতে
নিউজ ডেস্ক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৮:২২ পিএম, ১৩ ডিসেম্বর ২০১৮ বৃহস্পতিবার
নির্বাচনকালীন সময়ে গুজব মোকাবেলায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার প্রস্তাবনা উঠে এসেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয় সভায়। এছাড়া নির্বাচনের আগে ও পরে ইন্টারনেটের গতি কমানো ও মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বন্ধ রাখার প্রস্তাব উঠে এসেছে।
বৃহস্পতিবার একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সমন্বয় সভায় উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে এই ধরনের সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া দেশি-বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ওপর বিশেষ নজর রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে যাতে বিশেষ কোনো গোষ্ঠী পর্যবেক্ষণের আড়ালে অপপ্রচার চালাতে না পারে।
সভায় নির্বাচনের দিন সাংবাদিকদের ভোট কেন্দ্রে প্রবেশের বিষয়েও কড়াকড়ি আরোপের ওপর পুলিশের পক্ষ থেকে করণীয় নির্ধারনে প্রস্তাবনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ভোট চলাকালীন সময় কেন্দ্রের গোপন কক্ষে সাংবাদিকরা ছবি তোলা, ভিডিও করা ও সরাসরি সম্প্রচার করতে না পারে সেজন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়ার বিষয়টি উঠে আসে। এসব বিষয় চূড়ান্ত করতে শিগগিরই কমিশন থেকে একটি পরিপত্র জারি করা হতে পারে। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক পুলিশ ও ইসির কর্মকর্তারা বিষয়টি নিশ্চিত করেছন।
ভোট কেন্দ্রের চারশ' গজের মধ্যে মোবাইল ব্যবহার নিষিদ্ধ, ইন্টারনেটের গতি কমিয়ে ফোরজি থেকে টুজিতে নামানো, ভোট কেন্দ্রের চারশ' গজের ভেতরে গণমাধ্যম কর্মীরা যাতে মোবাইল ফোন ব্যবহার করতে না পারে তা নিয়েও আলোচনা হয়। এর মাধ্যমে কমিশন গণমাধ্যম আইনের কঠোর প্রয়োগ ব্যবহার করতে চান।
সভায় নির্বাচনে কালো টাকার ব্যবহার বন্ধে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম বন্ধ করার প্রস্তব করা হয়েছে। এই প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি দেয়া হয় নির্বাচনকালীন সময়ে বিদেশ থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা আসতে পারে। এসব টাকা নির্বাচনে অবৈধভাবে ব্যবহার করা হতে পারে।
নির্বাচনের সময় অভ্যান্তরীন ব্যাংক থেকে টাকা উত্তোলনের পরিমাণ বেড়ে গেছে। এসব টাকা কালো টাকা হিসেবে মনে করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিতে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ইসিকে অনুরোধ করেছেন। এছাড়া ভোটের এক সপ্তাহ আগে সকল বৈধ অস্ত্র (প্রার্থী ব্যতীত) জমা দিতে বলা হয়েছে।
সেনাবাহিনী মোতায়েনের বিষয়ে সভায় দুই ধরণের বক্তব্য উঠে এসেছে। ইসির পুর্ব ঘোষণা অনুযায়ী ২৪ ডিসেম্বর থেকে ১ জানুয়ারি পর্যন্ত সেনা মোতায়েনের সিদ্ধান্ত ছিল। সভায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর একটি পক্ষের দাবি, এই সময় নয় দিন থেকে বাড়ানো হোক। আর আরেক একটি পক্ষ চায় সেনাবাহিনীর মোতায়েনের সময় কমিয়ে বরং বিজিবিকে আরো আগে নামানো হোক।
রোহিঙ্গা বিষয়েও আলোচনা হয়েছে সভায়। রোহিঙ্গারা নির্বাচনে প্রভাবিত হতে পারে। সেজন্য বিশেষ নজরদারি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, আমার কাছে ২৪ ঘন্টা ফোন আসছে। বেশিরভাগই বলেন, স্যার ভোট দিয়ে বাসায় ফিরতে পারবো কিনা। ভোটারদের এই আশঙ্কা রাখা যাবে না। এটা দূর করতে হবে আপনাদের।
সভায় কমিশনার কবিতা খানম বলেন, গতকাল (১২ ডিসেম্বর) ঢাকা-১ আসনের প্রার্থীকে উঠিয়ে নিয়ে যাওয়া হলো। রিটার্নিং কর্মকর্তাকে ফোন করে জানতে চাইলে তিনি নাকি কিছু জানেন না। আপনার প্রার্থীকে তুলে নিয়ে গেলো আপনি কিছুই জানেন না। তাহলে এতো সমন্বয়হীনতা নিয়ে আপনারা কাজ করছেন কিভাবে। তিনি আরো বলেন, আগামী ২০ ডিসেম্বরের পর পরিস্থিতি আরো বেশি খারাপ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ওই সময়টাতে আপনাদের অধিক ধৈয্য ধারণ করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ফৌজদারি অপরাধ আর আচরণবিধি এক নয়। আপনাদের ছোট্ট একটা ভুলের কারণে অনেক কিছু ঘটে যেতে পারে।
আগামী ১৭ ডিসেম্বর প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাঙ্গামাটি যাবেন, এরপর ১৮ ডিসেম্বর যাবেন চট্টগ্রাম। সেখানে তিনি প্রার্থী ও ভোটারদের সাথে মতবিনিময় করবেন।
অন্যদিকে কমিশনার রফিকুল ইসলাম তার কার্যালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, আজকের সভায় অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তবে চূড়ান্ত কোন সিদ্ধান্ত হয়নি। এ নিয়ে গণমাধ্যমের উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। তিনি বলেন, সভার প্রস্তাবগুলোর বিষয়ে কমিশন বসে চূড়াস্ত সিদ্ধান্ত নেবে।
