বৃহস্পতিবার   ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫   পৌষ ১১ ১৪৩২   ০৫ রজব ১৪৪৭

রাজনীতি নয়, আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ প্রশাসন

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১০:৫২ এএম, ৫ মে ২০১৯ রোববার

নারায়ণগঞ্জের মানুষ সবসময়ই শান্তি, স্বস্তি ও সমৃদ্ধের একটি সুন্দর বসবাসযোগ্য নারায়ণগঞ্জ দেখতে চায়। যেখানে রাজনীতি কিংবা কোন প্রভাবশালীদের কাঁধে ভর করে কেউ নারায়ণগঞ্জকে কেউ বিশৃঙ্খল করতে পারবেনা। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নারায়ণগঞ্জবাসীর আগ্রহ রাজনীতিতে নয়, বরং তাদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ প্রশাসন। 


গেলো চারমাসে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ প্রশাসন চাঁদাবাজ, ভূমিদস্যু, মাদক কারবারী, সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লাগাতার বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে। এসব অভিযানে যারা ধরা পড়ছেন তাদের ছাড়াতে অনেক রথী-মহারথীরাও দৌঁড়ঝাপ করছেন। তাতে কোন কাজে আসছেনা। নারায়ণগঞ্জের বর্তমান সুযোগ্য পুলিশ সুপার সেসবে কোন কর্ণপাত না করে অভিযান পরিচালনা করছেন। এতে আশ্বান্বিত হয়ে উঠছে নারায়ণগঞ্জবাসী। পুলিশ সুপারের উপর নারায়ণগঞ্জবাসীর আস্থা আরো বেড়ে গেছে।  


অনুসন্ধানে জানা গেছে, পুলিশ প্রশাসনের এসব অভিযান অব্যাহত থাকায় নারায়ণগঞ্জে বিভিন্ন অপরাধ জনিত ঘটনা অনেক লোপ পেয়েছে। তাছাড়া চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী, চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসীরা গা ঢাকা দিয়েছে। রাজনৈতিক দলের নেতারাও তাদের দৌঁড়ঝাঁপ সীমিত করে রেখেছেন। একারণে নারায়ণগঞ্জের সার্বিক পরিস্থিতি সুস্থির রয়েছে। সাধারণ মানুষ মনে করে পুলিশ প্রশাসনের লাগাতার অভিযানের প্রভাব নারায়ণগঞ্জের সর্বস্থানে পড়েছে।


আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ছাড়াও নগরীতে সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে পুলিশ প্রশাসন নানা উদ্যেগ নেয়ায় পুলিশের উপর নারায়ণগঞ্জবাসীর আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে। 


বিশেষ করে নগরী ও নগরীর বাইরে যানজট নিরসনে পুলিশের বিভিন্ন পদক্ষেপকে সাধারণ মানুষের মনে আশা জাগিয়েছে। যানজট নিরসনে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদের আন্তরিকতা নারায়ণঞ্জবাসী আশান্বিত।

 

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে এসপি হারুন বলেন,‘আপনারা লক্ষ্যে করেছেন চাষাঢ়া থেকে সাইনবোর্ডে ৪৬টি ডিভাইডার করা হয়েছিলো। এ বিষয়ে আমরা বহুবার সড়ক ও জনপথকে অনুরোধ করেছি কিন্তু তারা আমাদের কথা আমলে নেয়নি। তাই আমরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই ৪৬টি ডিভাইডারের মধ্যে ৮ থেকে ১০টি ডিভাইডার রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। তার একটাই কারণ এ রমজান মাসে সাধারণ মানুষ যানজটে ভুগতে না হয়।’


এসপি হারুন আরো বলেন, ‘বড়বড়  দেশগুলোতে প্রতিটি সড়কে প্রায় ১০ থেকে ১৫ মাইল ঘুরে রাস্তা পারাপার হতে হয়। কিন্তু আমাদেও দেশের মানুষেরা একটু সুবিধার জন্য ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানের সামনে, বাসাবাড়ির সামনে নিজেদের মত করে ডিভাইডার রেখে দেন। ফুটপাতের মধ্যে মানুষের চলাচলের পথ আটকে বাস পার্কিং করে রেখে দেয়া হয়।

 

আমরা ফুটপাত হকারমুক্ত,অবৈধ পার্কিং মুক্ত রাখতে প্রতিনিয়ত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। তবে পুলিশ বা প্রশাসনের পক্ষে এ কাজ একার পক্ষে সম্ভব নয় এর জন্য সকলের সম্মিলিত উদ্যোগ ও সহযোগিতা প্রয়োজন।’ পুলিশ প্রশাসনের নেয়া এসব উদ্যেগকে স্বাগত জানাচ্ছে নারায়ণগঞ্জবাসীয়। 

 
বন্দর থানার ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি মামলায় ১৮ এপ্রিল দুপুর আড়াইটায় সদর উপজেলার পাইকপাড়া এলাকা থেকে  জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হাতে গ্রেপ্তার হন ১৭নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল করিম বাবু ওরফে ডিসবাবু। ইতিমধ্যে তার বিরুদ্ধে আরো কয়েকটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। একসময় নিজেকে সম্রাট মনে করা ডিসবাবুর এমন নাজেহাল অবস্থা দেখে বেপরোয়া হয়ে ওঠা তার সাঙ্গপাঙ্গরাও এলাকা ছেড়েছে।


২০ এপ্রিল ফতুল্লা থানা পুলিশের বিশেষ অভিযানে র‌্যাব, পুলিশের তালিকাভুক্ত দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ‘মূর্তিমান আতঙ্ক’  মোফাজ্জল হোসেন চুন্নুসহ ২৩  জন গ্রেপ্তার হয়। এ সময় চুন্নুর কাছ থেকে ৫ শতাধিক ইয়াবা ট্যাবলেট ও একটি বিদেশী পিস্তল উদ্ধার করা হয়। এরপরপরই চুন্নুর কথায় যেসব সন্ত্রাসী উঠবস করতো তারা লাপাত্তা বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।


চলতি মাসে ২২ এপ্রিল থেকে ২৩ এপ্রিল জেলায় ২৪ ঘন্টার মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার হয় ২০ মাদক ব্যবসায়ী ও সেবনকারী। এই অভিযানের পর বিভিন্ন এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে মাদক ব্যবসায়ী, সেবনকারী এবং তাদের সাঙ্গপাঙ্গরা গা ঢাকা দিয়েছে।


কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, ৭ ফেব্রুয়ারি ফতুল্লার চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মাদক কারবারি শাহ আলম গাজী ওরফে টেনু গাজীকে গ্রেপ্তার, নগরের ৫ নম্বর ঘাট এলাকা থেকে গত ১২ ফেব্রুয়ারি বিআইডাব্লিউটিএ এলাকায় জুয়ার বোর্ডে  অভিযান চালিয়ে ৪১ জুয়াড়িকে গ্রেপ্তার এবং তাদের স্বীকারোক্তিতে  জুয়াড়ি স্থানীয় জনৈক সাংবাদিক রাজু আহম্মেদের নাম আসা, ১১ মার্চ ফতুল্লার লঞ্চঘাট এলাকায় চোরাই জ্বালানি তেলের আস্তানায় পুলিশের অভিযানে বিপুল পরিমাণ চোরাই জ্বালানিসহ মূল হোতা ইকবাল হোসেন তিনজনকে গ্রেপ্তার, গত ২৭ মার্চ ফতুল্লার জামতলা এলাকায় জনৈক ভিকিসহ অন্যদের বিরুদ্ধে সিঙ্গাপুর প্রবাসী আজিজুল গাফফার খানের জমি দখলের চেষ্টার অভিযোগে মামলা এবং ঘটনার সঙ্গে জড়িত এজহারভুক্ত আসামি জাহিদুলকে গ্রেপ্তার এবং  গত ১ এপ্রিল রাতে ফতুল্লার পাগলা এলাকায় অবস্থিত মেরি অ্যান্ডারশনে ভাসমান জাহাজে পুলিশের অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ মাদকসহ ৬৮ জনকে গ্রেপ্তার পুরো জেলায় অপরাধীদের মনে ভয় ধরিয়ে দিয়েছে। 


অপরাধীদের বিরুদ্ধে এসপি হারুনের নির্দেশে চলমান অভিযান নারায়ণগঞ্জে নেতিবাচক ঘটনা অনেক কমে এসেছে। রাজনৈতিক অস্থিরতাও নেই বললেই চলে। আর এসব কারণে রাজনীতি নয়, নারায়ণগঞ্জবাসীর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে নারায়ণগঞ্জ পুলিশ প্রশাসন।