অন্য এক বিশ্বকাপে বাংলাদেশের পথশিশুরা
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৪:০৭ পিএম, ৪ মে ২০১৯ শনিবার

চলতি মাস শেষে ইংল্যান্ডে শুরু হচ্ছে ক্রিকেট বিশ্বকাপ৷ তার আগে শনিবার থেকে শুরু হওয়া অন্য এক বিশ্বকাপে বাংলাদেশসহ দশ দেশের পথশিশুরা অংশ নিচ্ছে৷
চার মেয়ে ও চার ছেলের সমন্বয়ে বাংলাদেশ দল গঠন করা হয়েছে৷ এর মধ্যে আছে সানিয়া ও রাসেল৷ দুইজনেরই বয়স ১৫ এবং তাদের গল্পও প্রায় একই রকম৷ গৃহকর্ত্রীর অত্যাচার থেকে বাঁচতে সেখান থেকে পালিয়ে গিয়ে বাড়ি ফেরার পথ না চেনায় কিছু দিন পথেই বাস করতে হয়েছে সানিয়া মির্জাকে৷ পরে ‘লোকাল এডুকেশন অ্যান্ড ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট অর্গানাইজেশন' বা লিডো নামের এক সংগঠন তাকে আশ্রয় দেয়৷ সংগঠনটি পথশিশুদের নিয়ে কাজ করে৷
অভাবের কারণে সানিয়ার বাবা মেয়েকে কাজ করতে শহরে এক দম্পতির কাছে পাঠিয়েছিলেন৷ কিছু দিন সেখানে ভালোই ছিল সানিয়া৷ কিন্তু ওই দম্পতির প্রথম সন্তান জন্ম নেয়ার পর সানিয়ার ওপর অত্যাচার শুরু করেন তারা৷ এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে সানিয়া সেখান থেকে পালিয়ে ট্রেন ধরে কমলাপুর চলে যায়৷ তার পর সে বাবার কাছে ফিরতে গিয়ে বুঝতে পারে যে, সে বাড়ির পথ চেনে না৷ এর পর থেকেই সানিয়ার আশ্রয়স্থল লিডো৷
সানিয়ার সহ-খেলোয়াড় রাসেলের মা ছেলেকে ভাইয়ের কাছে রেখে বিদেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন৷ রাসেলের বাবা তার জন্মের আগেই মারা গেছেন৷ এই অবস্থায় মামা-মামি তাকে অত্যাচার করলে সেখান থেকে সেও পালিয়ে যায়৷ পরে তারও আশ্রয় হয় লিডোর আশ্রয়কেন্দ্রে৷
জার্মান গণমাধ্যম ডয়চে ভেলে এক প্রতিবেদনে বলেছে, এই আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মোট আটজন শিশুই পথশিশুদের ক্রিকেট বিশ্বকাপে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছে৷
বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়ে রোমাঞ্চিত সানিয়া ও রাসেল৷ সানিয়া বলছে, ‘এটা স্বপ্নপূরণের মতো৷ আমার বিশ্বাস হচ্ছে না যে, আমি বিশ্বকাপ খেলব৷’
রাসেল বলছে, ‘আমি এমন জায়গায় ক্রিকেট খেলব যেখানে খেলাটার জন্ম হয়েছে৷ আমি লর্ডসে খেলব৷ আমার মনে হয় না, অনেক মানুষ এমনটা বলতে পারবে৷’
প্রসঙ্গত, লন্ডনভিত্তিক দাতব্য সংস্থা ‘স্ট্রিট চাইল্ড ইউনাইটেড' প্রথমবারের মতো পথশিশুদের জন্য ক্রিকেট বিশ্বকাপের আয়োজন করেছে৷ এর আগে অবশ্য তারা চার বার পথশিশুদের জন্য ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজন করেছিল৷
পথশিশুদের বিষয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য এ ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়৷ পথশিশুদের পাচার ও নিপীড়নের শিকার হওয়ার ঝুঁকি থাকে বলে জানান বিশ্লেষকরা৷
জাতিসংঘের হিসাব অনুযায়ী বিশ্বে পথশিশুদের সংখ্যা দেড় শ মিলিয়ন পর্যন্ত হতে পারে৷
ইউরোপীয় ইউনিয়নের সহায়তায় পরিচালিত এক জরিপ বলছে, বাংলাদেশে পথশিশুর সংখ্যা প্রায় সাত লাখ৷ এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের বাস ঢাকাতেই৷
উল্লেখ্য, আগামী মঙ্গলবার লর্ডসে প্রতিযোগিতার ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে৷