ভোটের মাঠে সেনাবাহিনী
নিউজ ডেস্ক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০২:১৩ এএম, ২৫ ডিসেম্বর ২০১৮ মঙ্গলবার
নির্বাচন ঘিরে আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করতে সোমবার থেকে মাঠে নেমেছে সেনাবাহিনী। এরই মধ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকায় তারা ক্যাম্প তৈরির কাজ সম্পন্ন করেছেন। দেশের কোনো কোনো এলাকায় সোমবার টহল দিয়েছেন সেনারা। আন্তঃবাহিনী সমন্বয় সভাও হয়েছে কোথাও কোথাও।
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে দেশের ৩৮৯ উপজেলায় সেনা ও উপকূলবর্তী ১৮টি উপজেলায় নৌবাহিনীর সদস্যরা নিয়োজিত থাকছেন। এ ছাড়া সীমান্তবর্তী এলাকার ৮৭ উপজেলায় বিজিবি সদস্যরা মোতায়েন রয়েছেন। 'ইনস্ট্রাকশন রিগার্ডিং ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার'-এর আওতায় সশস্ত্র বাহিনী দায়িত্ব পালন করছে। আইন-শৃঙ্খলা সংক্রান্ত কোনো পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীকে ডাকা হলে তারা সেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শক্তি প্রয়োগ ও জড়িতদের গ্রেফতার করতে পারবেন।
সেনাবাহিনী মোতায়েনের পর বিএনপি ও ঐক্যফ্রন্ট থেকে পৃথকভাবে বলা হয়, সেনা মোতায়েনের ফলে নির্বাচনের মাঠের পরিস্থিতির উন্নতি হবে। সংঘাত-সহিংসতা কমবে। আওয়ামী লীগ নেতারাও বলছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী মাঠে নেমেছে। তারা কোনো দলের বা পক্ষের নয়। নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে সিভিল প্রশাসনকে সহযোগিতা করতে সেনাবাহিনী তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে।
সোমবার রাজধানীর কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, সেনাবাহিনী নিজ নিজ ক্যাম্প এলাকায় অবস্থান নিয়েছে। আশপাশের এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করা হয়। মিরপুরের দারুস সালাম এলাকায় কমিউনিটি সেন্টারে সেনা ক্যাম্প স্থাপন করা হয়।
সেখানে গিয়ে দেখা যায়, ক্যাম্পের সামনের সড়কে ছোট্ট সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে, 'সেনা ক্যাম্প'। এ ছাড়া মিরপুর-২ নম্বরে জাতীয় সুইমিং কমপ্লেপের ভেতরে বসানো হয়েছে সেনা ক্যাম্প। গুলিস্তানে মওলানা ভাসানী হকি স্টেডিয়ামসহ আরও কিছু এলাকায় বসানো হয়েছে সেনা ক্যাম্প।
এদিকে আইএসপিআরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে 'জয়েন্ট কো-অর্ডিনেশন সেল' স্থাপন করা হয়েছে।
নারায়ণগঞ্জে সমন্বয় সভা:
সোমবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আন্তঃবাহিনী সমন্বয় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় নারায়ণগঞ্জের দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রাকিব বলেন, আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি নির্বাচনী আসনে ৪০০ সেনাসদস্য দায়িত্ব পালন করবেন। জেলায় এরই মধ্যে পাঁচটি ক্যাম্প স্থাপন করা হয়েছে।
সভায় রিটার্নিং অফিসার ও জেলা প্রশাসক রাব্বি মিয়া বলেন, নারায়ণগঞ্জ বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ জেলা। নির্বাচনকে পুঁজি করে কোনো অপশক্তি যাতে নারায়ণগঞ্জের অগ্রযাত্রা ও মানুষের শান্তি ব্যাহত করতে না পারে, সে জন্য জাতীয় সংসদ নির্বাচন আচরণ বিধিমালা নিশ্চিত করতে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাঠ পর্যায়ে কাজ করবেন।
বাংলাদেশ বডার গার্ড (বিজিবি) নারায়ণগঞ্জ ব্টাযালিয়নের সিও লে. কর্নেল আল-আমিন বলেন, 'আইন-শৃঙ্খলা স্থিতিশীল রাখতে নারায়ণগঞ্জ জেলায় ইতিমধ্যে দায়িত্ব পালন করছেন বিজিবির প্রায় ৪৫০ সদস্য। অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে রিটার্নিং অফিসারের পরামর্শে বিজিবি তাদের ওপর অর্পিত পবিত্র দায়িত্ব পালনে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)-১১-এর সিও কমান্ডার রাসেল আহমেদ বলেন, র্যাব জঙ্গি দমন, মাদক নির্মূল ও সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ইতিমধ্যে নারায়ণগঞ্জ তথা দেশবাসীর আস্থা অর্জন করেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও নিরপেক্ষ করার লক্ষ্যে নিয়মিত টহল, সব বাহিনীর মধ্যে যৌক্তিক ও কার্যকর সমন্বয়, পরামর্শকরণ ও উদ্ভূত বিশেষ পরিস্থিতি মোকাবেলায় করণীয় বিষয়ে আলোকপাত করেন তিনি।
পুলিশ সুপার হারুন অর রশীদ বলেন, নির্বাচন ঘিরে জেলা পুলিশের কর্মতৎপরতা শুরু হয়েছে অনেক আগে থেকে। রিটার্নিং অফিসারের পরামর্শে অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে সমন্বয় করে দায়িত্ব পালনে জেলা পুলিশ বদ্ধপরিকর।
বগুড়ায় ৭০০ সেনা সদস্য মোতায়েন:
বগুড়ার ১২টি উপজেলায় সেনাবাহিনীর ৭০০ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। এর মধ্যে জেলা সদরে ১৫০ জন সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। বাকি ৫৫০ সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে ১১টি উপজেলায়।
মোতায়েনের প্রথম দিনই সেনাসদস্যরা শহরে টহল শুরু করেছেন। বিকেলে একটি দলকে শহরের জিরো পয়েন্ট এলাকায় টহল দিতে দেখা যায়। সেনাবাহিনীর একটি দল সোমবার দুপুরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক ফয়েজ আহাম্মদের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠকে সেনাবাহিনীর পক্ষে লে. কর্নেল রায়হান উপস্থিত ছিলেন।
বগুড়ার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) আব্দুল মালেক জানান, বগুড়া সদর উপজেলা বাদে প্রতিটি উপজেলায় ৫০ জন করে সেনাসদস্য দায়িত্ব পালন করবেন।
পাবনা:
পাবনায় টহল শুরু করেছে সেনাবাহিনী। রোববার রাতে পাবনায় এসে ক্যাম্পে অবস্থান নেন সেনাবাহিনীর সদস্যরা। সোমবার সকাল থেকে তারা জেলা ও উপজেলা সদরসহ বিভিন্ন স্থানে টহল শুরু করেছেন।
