একবিংশ শতাব্দীর বিষ্ময়কর আবিষ্কার!
নিউজ ডেস্ক
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৯:২৫ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ সোমবার

আধুনিক বিশ্বে মানববিহীন আকাশযান ‘ড্রোন’ নিয়ে গবেষণার শেষ নেই। অভিজ্ঞ চালকের নৈপূণ্যতায় নিরাপদ স্থানে বসেই ঝুঁকিপুর্ন স্থান থেকে সহজেই তথ্য আদান-প্রদান করা যায়। এছাড়া আকাশযানটি ক্ষুদ্র হওয়ায় প্রতিপক্ষের নিরাপত্তা বেষ্টনি ফাঁকি দিয়ে শত্রু-পক্ষকে ঘায়েল করার জন্য তাদের গোপন তথ্য সংগ্রহ ও আক্রমনে ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে পারে বলেই আধুনিক প্রযুক্তি বিশ্বে এটি নিয়ে এতো আগ্রহ।
আকাশযানটি পাইলটবিহীন হওয়ায় যুদ্ধক্ষেত্র ও ঝুঁকিপূর্ন স্থানে মৃত্যু বা হতাহতের আশঙ্কা থাকে না। পাইলট না থাকায় ককপিট, অক্সিজেনসহ অনেক কিছুর প্রয়োজন হয় না। ফলে আকাশযানটি ক্ষুদ্র হয় এবং অধিক অস্ত্র বহন করা সম্ভব হয়। ড্রোন যাত্রায় সফল ব্যবহারকারি হিসেবে সর্বপ্রথম যে নামটি উঠে আসে তা হলো যুক্তরাষ্ট্র। অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দিয়ে ড্রোন তৈরীতে বেশ সফল এই দেশটি। তাদের তৈরী ড্রোন বিভিন্ন দেশের নিরাপত্তা ফাঁকি দিয়ে দেশের অভ্যন্তরে সহজেই ঢুকে পড়তে পারে। ঠিক তেমনি ভাবে দূর থেকে এসব বিমান নির্দিষ্ট লক্ষ্যে অনায়াসেই আঘাত করতে সক্ষম। যদিও এতে অন্যান্য দেশের সার্বভৌমত্ব ক্ষুন্ন হয়।
পাকিস্তান, ইয়েমেনসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশকিছু দেশের সন্ত্রাস দমনে যুক্তরাষ্ট্র এসব প্রযুক্তি ব্যবহার করে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন দ্বারা আকাশপথে বিভিন্ন অভিযান ও হামলা দীর্ঘদিন ধরেই উন্নত দেশগুলোর মাথা-ব্যাথার কারণ হয়ে ওঠে। বিশেষ করে চীনা সামরিক বাহিনীর। এর প্রধান কারণ হলো, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে অধিপত্য বিস্তারের ক্ষেত্রে চীনের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী যুক্তরাষ্ট্র। সামরিক শক্তিতে যুক্তরাষ্ট্রের সমকক্ষ না হলেও প্রতিপক্ষের সাথে পাল্লা দিয়ে চায়না ড্রোন গবেষক দল প্রথমবারের মত রাডার ফাঁকি দেয়া মানববিহীন বিমান তৈরী করতে সক্ষম হয়। যা ২১ শে নভেম্বর ২০১৩ সালে পরীক্ষামূলক ভাবে তাদের আকাশে উডায়। বিমানটি যুক্তরাষ্ট্রের বি-২ বোমারু বিমানের সাথে অনেকটাই মিল রয়েছে।
যদিও এই প্রতিযোগিতায় চীন ছাড়াও ফ্রান্স, নেদারল্যান্ডস ও ইসরাইলের মতো বিশ্বের সামরিক ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো নেমেছিলো। তবে এই শিল্পে বৈপ্লবিক উন্নায়ন আনে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক মাইক্রো অ্যারিয়াল ভেহিকল(MAV) নামের একটি ড্রোন তৈরী করেন। এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো, এটি দেখেতে কীট-পতঙ্গের আকারের হয়। এই ড্রোন ক্ষুদ্র হলেও এর আছে উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্যামেরা ও মাইক্রোফোন। এই আকাশযানটি দিয়ে সহজেই গুপ্তচর অভিযান চালানো যায়। এই পতঙ্গ আকারের ড্রোনগুলো সহজে রাডার ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন দেশ ও শহরে ঢুকে পডতে পারে।
গবেষকদের মতে, এই ড্রোনের মাধ্যমে আধুনিক বিজ্ঞানকল্পের আঙ্গিকে গড়ে উঠা দৃশ্যগুলোর মতো কার্য সম্পাদন করা সম্ভব। যেমন, অতিসুক্ষ সুঁই ফুটিয়ে সন্দেহভাজন ব্যাক্তির দেহ থেকে মহুর্তেই DNA নমুনা সংগ্রহ করা যাবে। এই ক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তিটি মশার কামড়ের চেয়ে অতিরিক্ত ব্যাথা অনুভব করবে না। কাজটি সম্পাদনের ফলে যদিও যন্ত্রণা হয় না কিন্তু জায়গাটা ফুলে উঠবে। এছাড়া ড্রোনটি দ্বারা উক্ত সন্দেহভাজন ব্যক্তির দেহে অতিক্ষুদ্র আকারের রেডিও ফ্রিকোয়েন্সী আইডিনটিফিকেশন সংক্ষেপে (RFID) বসিয়ে দিয়ে আসবে। ফলে কেন্দ্র থেকে উক্ত লোকটির চলাফেরা ও কাজকর্মের উপর নজরদারি করা যাবে।
তবে নিরাপত্তা শৃঙ্খল ফাঁকি দিয়ে কারো প্রতি গুপ্ত-নজরদারি ও আক্রমণ করা অনৈতিক। এতে রাষ্ট্র ও জনগনের সার্বভৌমত্ব ক্ষুণ্ণ হয়, তবে তথ্যপ্রযুক্তির সৎ ও যোগ্য ব্যবহারের ফলে এটিই হতে পারে আর্শিবাদস্বরুপ। তাই বিভিন্ন গবেষকরা এটিকে একবিংশ শতাব্দীর বিষ্ময়কর আবিষ্কার বলে মনে করেন।