বুধবার   ১৩ আগস্ট ২০২৫   শ্রাবণ ২৮ ১৪৩২   ১৮ সফর ১৪৪৭

মহাকাশে পারমানবিক বিষ্ফোরণের ফলাফল কী?

নিউজ ডেস্ক

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৯:১৪ পিএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ সোমবার

পারমানবিক শক্তি আবিষ্কারের পর থেকেই বারংবার এর ব্যবহার কিছু ক্ষেত্রে শঙ্কিত করেছে, ভাবিয়েছে মানবজাতির অস্তিত্ত্ব সংকট সম্পর্কে। আবার কিছু ক্ষেত্রে পারমানবিক শক্তির ব্যবহার এনে দিয়েছে অভূতপূর্ব সাফল্য।পারমানবিক শক্তি ব্যবহার করে মানুষ ঘুচিয়েছে বিদ্যুৎ সংকট। এই বিদ্যুৎ উৎপাদন পারমানবিক শক্তির ব্যবহার কমিয়েছে ফসিল ফিউল এর ব্যবহার।

যে কারণে একই সঙ্গে হ্রাস পেয়েছে পরিবেশ দূষণ এবং জ্বালানী সংকট। বায়োকেমিস্ট্রির গবেষণা এবং নতুন জাতের ফসল উৎপাদনেও পারমানবিক শক্তি দিয়েছে এক নতুন মাত্রা। কিন্তু এইসঙ্গে মানবজাতিকে অস্বস্তি সংকটে ভাবিয়েছে।পারমানবিক বোমা মানব ইতিহাসের অন্যতক ধ্বংসাত্ত্বক আবিষ্কার। তবুও পরাশক্তিগুলো প্রতিনিয়তই নতুন নতুন পারমানবিক পরীক্ষা করে যাচ্ছে। এমনকি পরীক্ষা এতই ভয়ঙ্কর যা মানবজাতির ধ্বংস ডেকে নিয়ে আসতে পারে।এমনই এক পরীক্ষা হল মহাকাশে পারমানবিক বিষ্ফোরণ সংগঠিত করা। কী হবে যদি মহাকাশে পারমানবিক বিষ্ফোরণ সংগঠিত করা হয়?

প্রথম মহাকাশে পারমানবিক বিষ্ফোরণ ঘটানো হয়েছিল ১৯৬২ সালে। স্নায়ু যুদ্ধের প্রক্কালে পরাশক্তিগুলো যে ভয়ানক অস্ত্র পরীক্ষার প্রতিযোগীতায় নামে এটি তারই একটি অংশ ছিল। “যন্সটন আইল্যান্ডে” মার্কিন সরকার এই পরীক্ষা চালায়। এই পরীক্ষায় ব্যবহৃত হয়েছিল ১ দশমিক ৪ মেগাটন ক্ষমতাসম্পন্ন পারমানবিক বোমা যার নাম ছিল “স্টারফিস প্রাইম”। এই বোমাটি ভূপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৪০০ কিলোমিটার উচ্চতায় ফাটানো হয়েছিল। এই বিষ্ফোরণের প্রভাবে মহাকাশে একটি দৌত্তাকৃতি আগুনের গোলার সৃষ্টি হয়েছিল একইসঙ্গে আরেকটি শক্তির সৃষ্টি হয় যাকে “ইএমপি” বা ইলেকট্রোম্যাগনেটিক পালস বলা হয়। ইএমপি এর প্রভাবে একটি ইলেকট্রো ম্যাগনেটিক শকওয়েভ তৈরি হয় যা পারমানবিক বিষ্ফোরণের আশেপাশের সকল ইলেকট্রনিক জিনিসপত্র কিছু সময়ের জন্য বিকল করে দেয়।

এই বিষ্ফোরণের সময়ও পুরো হাওয়াই দ্বীপের বিদ্যুৎ চলে গেছিল।একইসঙ্গে মার্কিন পূর্ব উপকূলের সকল রাডার এবং যুদ্ধ জাহাজের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা বিকল হয়ে গিয়েছিল এবং বিষ্ফোরণের আশেপাশের সকল স্যাটালাইট চিরতরে নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। মাত্র ১ দশমিক ৪ মেগাটনের পারমানবিক বোমার ক্ষতি এর প্রসর ছিল।বর্তমানের পারমানবিক বোমাগুলোর চেয়ে কয়েকগুণ বেশি শক্তিশালী। পৃথিবীর এখন পর্যন্ত সবচেয়ে শক্তিশালী পারমানবিক বোমা হল “টাসার বোম্ব”।যার ক্ষমতা ৫০ মেগাটন। যদি মহাকাশে এই পারমানবিক বোমার বিস্ফোরণ ঘটানো হয় তবে ফলাফল কী হবে?

 

“টাসার বোম্ব” বা এর থেকেও শক্তিশালী পারমানবিক বোমা যদি মহাকশে বিষ্ফোরিত হয় তবে স্টারফিস প্রাইমের তুলনায় প্রায় ৫০ গুণ বড় একটি আগুনের গোলা সৃষ্টি হবে যার রশ্মী সূর্যের থেকে কয়েকগুণ বেশি শক্তিশালী।এই বিষ্ফোরণের দিকে খালি চোখে ১০ সেকেন্ড তাকালেই তা যে কোনো মানুষকে অন্ধ করে দিতে পারে।বিষ্ফোরণে সরাসরি পৃথিবীর মানুষ রেডিও এক্টিভ অ্যানার্জিতে ক্ষতিগ্রস্থ না হলেও পৃথিবীর জনসংখ্যার প্রায় চার ভাগের এক ভাগ অসতর্কতাবশত চিরতরে অন্ধ হয়ে যাবে।তাছাড়াও এই বিষ্ফোরণে যে ইএমপি সৃষ্টি হবে তা চিরতরে ধ্বংস করে দিতে পারে অনেক অঞ্চলের বিদ্যুৎ ব্যবস্থা।ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা বিঘ্নিত হবে।

কোনো কোনো ক্ষেত্রে বন্ধ হয়ে যাবে সকল খাদ্য পণ্য উৎপাদন ব্যবস্থা।যে কারণে অনেক মানুষ খাদ্যাভাবে মৃত্যুবরণ করবে।এই বিষ্ফোরণের ইএমপি ওয়েভ মহাকাশের সকল স্যাটালাইটের ক্ষতি সাধন করবে। বেশিরভাগ স্যাটেলাইট পুনরায় ব্যবহার অযোগ্য হয়ে যাবে।ফলে পুরো পৃথিবীর যোগাযোগ ব্যবস্থা ও ইন্টারনেট এবং কেবল নেটওয়ার্ক নষ্ট হয়ে যাবে।কিন্তু এই বিষ্ফোরণের তেজস্ক্রিয়তায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবে পৃথিবীর বায়ুমন্ডলের ওজন স্তর।যা আমাদেরকে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে রক্ষা করে। ফলে পৃথিবীতে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মী প্রবেশ পূর্বের তুলনায় বেড়ে যাবে এবং ক্ষতি করবে অনেক বৃক্ষ প্রজাতির ও শষ্যের। যাতে পুরো পৃথিবীতে খাদ্যাভাব দেখা যাবে।এছাড়াও সূর্যের রশ্মীতে মানুষের চোখ এবং ত্বকের ক্ষতি সাধন হবে যা পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়।

 

পুরো বিশ্ব এখনো পারমানবিক বোমার ঝুকিমুক্ত না হলেও স্নায়ু যুদ্ধের পরবর্তী অবস্থায় বিশ্বের বেশিরভাগ দেশই পারমানবিক বোমা নিরাময়ের চুক্তিতে সাক্ষর করে। ফলে পরাশক্তিগুলোর পারমানবিক পরীক্ষা করার হারও কমে গেছে।একই সাথে মহাকাশে শক্তিশালী পারমানবিক বিষ্ফোরন হওয়ার সম্ভাবনা এখন পূর্বের তুলনায় অনেক কম এবং অনেক বিশ্বনেতাই পারমানবিক বোমা হ্রাসের জন্য কাজ করছেন।ফলে ভবিষ্যৎতে হয়তো আমরা একটি পারমানবিক বোমামুক্ত পৃথিবীর আশা রাখতে পারি।