জাতীয় চেতনার স্মারক ‘দোয়েল চত্বর’
নিউজ ডেস্ক :
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০১:৫৫ পিএম, ২৫ এপ্রিল ২০১৯ বৃহস্পতিবার

সাদা-কালো পালকের সুন্দর এক পাখি দোয়েল। গ্রামে ভোরবেলা দোয়েলের কিচিরমিচির শব্দ শুনে ঘুম ভাঙেনি এমন লোক খুঁজে পাওয়া ভার। শস্যের খেতের নানা রকম পোকামাকড় ভক্ষণ করে বেঁচে থাকা দোয়েল সবুজে শ্যামলে ঘেরা এই বাংলাদেশের জাতীয় পাখি - এ কথা কার অজানা? দু'টাকার কাগজি মুদ্রার একপাশে দোয়েল পাখির ছবি সংযোজন আমাদের জাতীয় চেতনার প্রতিফলন। গ্রাম পেড়িয়ে আধুনিক সভ্য নাগরিক সমাজের সাহিত্য-সমালোচনার বিরাট জায়গায় দোয়েলের বিচরণ। ঢাকা শহরের যান্ত্রিকতার মধ্যে জাতীয় চেতনার স্মারক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হলের পাশে ভাস্কর আজিজুল জলিল পাশা সৃষ্টি করেছেন এক অনন্য সৃষ্টি -দোয়েল পাখির ভাস্কর্য।
১৯৭৪ সালে রাষ্ট্রায়ত্ত উত্তরা ব্যাংক (বর্তমানে উত্তরা ব্যাংক লিমিটেড) এর আর্থিক সহায়তায় তৈরি হয়েছে জোড়া দোয়েলের এই ভাস্কর্য। জানা যায়, উত্তরা ব্যাংক ভাস্কর্যটির ব্যাবস্থাপনার জন্য আর্থিক সহায়তা দিয়ে থাকে। অযত্ন, অবহেলার কারণে ক্রমশ দোয়েলের ভাস্কর্যকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা দোয়েল চত্বরের সৌন্দর্যহানি ঘটে। ২০১৬ সালে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র সাঈদ খোকনের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হয় দোয়েল চত্বরের সংস্কার কাজ। এতে যোগ করা হয় আধুনিক লাইটিং ব্যাবস্থা, ১২০টি ট্যাপের পানি দিয়ে ফোয়ারা, লাগানো হয় নানা রঙের ফুলের গাছ। অত্যন্ত সুন্দর এই স্থাপনার চারপাশ জুড়ে রয়েছে শিশু একাডেমি, তিন নেতার মাজার, ঢাকা গেইট, কার্জন হলের মতো ঐতিহাসিক সব স্থান।
দোয়েল চত্বরের ফুটপাতের দিকে তাকালেই চোখ চমকে উঠে সুবিশাল মৃৎশিল্প মার্কেট দেখে। কারুশিল্পের যেন এক পসরা সাজানো জায়গা। ১৯৯৬ সালে মাত্র ২টি দোকান নিয়ে শুরু হওয়া এই মার্কেটটি কালপরিক্রমায় আরো সম্প্রসারিত হয়েছে। বর্তমানে সেখানে ৪০ টি মৃৎশিল্প-কারুশিল্পের দোকান রয়েছে। নানা ধরনের গৃহস্থালির তৈজসপত্র পাওয়া যায় সেখানে। দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে আবালবৃদ্ধবনিতা প্রতিদিন সেখানে কিছু না কিছু কিনতে যাবেই। বাঁশি, কুলা, শিকা, আয়না, পুতুল, ফুলদানি, ফুলের টবসহ নানা ধরনের সৌখিন পণ্যের সমাহার হচ্ছে এই দোকানগুলো। মৃৎশিল্প-কারুশিল্প মার্কেটের বিপরীত দিকের ফুটপাতে কেনা-বেচা হয় বিভিন্ন রকমের ফুলের, ফুল গাছের। এসবের মূল্যমান ২০টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫০০টাকার মধ্যেই থাকে।
ছোট্ট পরিসরে বাংলাদেশের শেকড়, গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের নানা বিষয়ের সুঘ্রাণ পাওয়া যায় দোয়েল চত্বর ভ্রমণ করলে। আশঙ্কার বিষয় এই যে, ইতোপূর্বে বিভিন্ন সময় ফুটপাতের এই দোকানগুলোতে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়েছে। বলা যায় সারাদেশের অন্যতম সুবৃহৎ মৃৎশিল্প মার্কেট হচ্ছে দোয়েল চত্বরের মার্কেটটি। অচিরেই এর সংস্কার করে দোকানগুলোর স্থায়িত্ব নিশ্চিত করা না গেলে দেশের নান্দনিক চেতনায় নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। যাহোক,দোয়েলচত্বরকে ঘিরে জড়িয়ে আছে এদেশের শিক্ষা, রাজনীতি, সংস্কৃতি সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়।
এই তো সেদিনকার ঘটনা। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে আন্দোলনকারীদের অবস্থানের একটি বিশেষ জায়গা ছিল দোয়েল চত্বর। কয়েকদিন আগে এখানেই পড়া গাছে চাপা পড়ে মারা যান এক নারী। অমর একুশে বইমেলার সময়গুলোতে দোয়েল চত্বরকে ঘিরে নেয়া হয় নানা নিরাপত্তা পদক্ষেপ। আমাদের জাতীয় চেতনার স্মারক হিসেবে বিশেষ এক জায়গা জুড়ে আছে দোয়েল চত্বর। এই স্থাপনাটি সম্বন্ধে আমাদের জানা এবং জানানো উভয়ই বড় আগ্রহের বিষয়। গুরুত্বপূর্ণ এই জায়গার রক্ষণাবেক্ষণ ও সংরক্ষণে সরকারসহ জনসাধারণের প্রত্যক্ষতল সচেতনতার দৃষ্টি বহাল রাখা বাঞ্ছনীয়, আবশ্যক।