সোমবার   ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫   ভাদ্র ৩১ ১৪৩২   ২২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

অপরিণত বয়সে বলিরেখা এড়াতে

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৪:০৬ পিএম, ১৯ এপ্রিল ২০১৯ শুক্রবার

অনেকেরই অপরিণত বয়সে শরীরে বলিরেখা বা বয়সের ছাপ পড়ে থাকে। কম বয়সেই অনেকের মধ্যে বুড়িয়ে যাওয়ার ভাব দেখা যায়। যার ফলে বিভিন্ন রকম অপ্রীতিকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। এই বলিরেখা বা বয়সের ছাপ নিজেদের অসতর্কতার কারণেও হয়ে থাকে। ত্বকের সঠিক পরিচর্যা না করার অন্যতম ফলাফল এই বলিরেখা বা বয়সের ছাপ। তাই এখন থেকেই খেয়াল রাখুন ২২ বছরেই যেন লাফ লাইন্স না পড়ে। চলুন তবে জেনে নেয়া যাক অপরিণত বয়সে শরীরে বলিরেখা পড়ার পেছনের কারণগুলো-  

সূর্যের আলো
সূর্যের আলো ত্বকের জন্য অনেক ক্ষতিকর। সূর্যের রশ্মি এবং চুলার আগুনের ফলে ত্বকের কোলাজেন ব্রেক করে। যে কারণে ত্বক পাতলা হতে থাকে এবং ঝুলে পড়ে। ধীরে ধীরে রিংকেল তৈরি হয়। আর তারপর আপনার শরীরে বয়সের ছাপ পড়ে। ফলে সানস্ক্রিন আপনার যতই তেলতেলে, চিটচিটে লাগুক না কেন! এই অজুহাত কিন্তু আপনার ত্বককে বোঝাতে পারবেন না। তাই ত্বককে সূর্যের আলো থেকে রক্ষা করতে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন। 

 

ফ্যাটবিহীন ডায়েট
আজকাল অনেকেই ডায়েট করে থাকে। এই ডায়েটের কারণে দেহের দরকারি ফ্যাট টুকুও গ্রহণ করে না অনেকেই। কিন্তু স্নেহ বা ফ্যাটের একটা প্রধান কাজ হল দেহের ত্বককে আদ্র বা ময়েশ্চারাইজড রাখা। বাইরে থেকে বিভিন্ন প্রসাধনী ব্যবহারে তা করা যায় না। শুষ্ক ত্বক খুব দ্রুত ফাইন লাইন বা রিংকেলের শিকার হয়। আর এইজন্য আজকাল খুব কম বয়সি কিশোরী বা তরুণী যারা কোনও সঠিক জ্ঞান অর্জন না করে নিজে নিজে সারাদিন ‘ডায়েট’ করে তাদের ত্বকের লাবণ্য কমছে, ফাইনলাইন বাড়ছে। এই রকম ডায়েট প্ল্যান করে আপনি নিজেই নিজের ক্ষতি করছেন। এর চেয়ে ডেইলি কনট্রোলড ডায়েট প্র্যাকটিস করুন। প্রয়োজনীয় ফ্যাট অবশ্যই খাবেন।  

ধূমপান
ধুমপানের ফলে মুখের চারপাশে ফাইন লাইন তো দেখা যায়ই। সাথে সাথে এর কেমিক্যালগুলো দেহের ভিটামিন সি লেভেল কমিয়ে দেয়। যা সূর্যের রশ্মি থেকে ত্বককে রক্ষা করার হার কমায়। এর ফলে ডাবল সান ড্যামেজ হয়। তাছাড়া চেষ্টা করতে হবে প্যাসিভ স্মোকিংও এড়িয়ে চলতে। এটা কিন্তু আরও বেশি ক্ষতিকর। আপনার আশে পাশে এমন কোন কাণ্ডজ্ঞানহীন ব্যাক্তি থাকলে তাকে আপনার আশেপাশে ধূমপান করতে অবশ্যই নিষেধ করবেন।

 

ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন
জানেন কি অতিরিক্ত হাসা, ভ্রু কোঁচকানো এবং অন্যান্য ফেসিয়াল এক্সপ্রেশনের ফলে ত্বকে অকালে বলিরেখা পড়ে থাকে। স্পেশালি লাফ লাইন্স, চোখের পাশে ক্রোজ ফিট রিংকেল আর কপালের রিংকেল। তাই অযথা চোখ কপালে তোলা, ভ্রু কুঁচকে তাকানো এসব কমানোর চেষ্টা করুন। অনেকে থাকেন যাদের চোখের পাওয়ার দিন দিন কমছে। কিন্তু সঠিক চশমা ব্যবহার না করে তারা কষ্ট করে ভ্রু কুঁচকে সারাদিন দেখার চেষ্টা করে জান। এদের একই সাথে ডার্ক সার্কেল আর রিংকেল দুই সমস্যাই হয়। তাই আপনার একটু সাবধানতাই অকালে রিংকেল প্রতিরোধে কাজে আসে।  

মেকআপ টেকনিক
আমরা একটা পারফেক্ট লুকের জন্য অনেক সময় নিয়ে চোখ সাজিয়ে থাকি। তবে জানেন কি,আমাদের আই এড়িয়ার ত্বক একটা টিস্যু পেপার থেকেও বেশি পাতলা। কিন্তু দেখা যায় আপনি বেশি প্রেসার দিয়ে রোজ আই মেকআপ করছেন, ডাবল ট্রিপল প্রেসার দিয়ে আবার সেই মেকআপ ঘসে তলার চেষ্টা করছেন। এই কারণেই ফাইন লাইন পড়ে থাকে। মনে রাখবেন, মেকআপ ডেইলি না করলেও চলে। আর যদি করতেই হয় তবে রিমুভ করার জন্য অয়েল ক্লিঞ্জার ইউজ করবেন। তেল আর কাপড় দিয়ে ঘষাঘষি করবেন‘না। চোখের পাশে প্রতিটা টাচ আপনার ফাইন লাইনের চান্স বাড়াচ্ছে এটা মাথায় রেখে মেকআপ ব্রাশ ব্যবহারে সতর্ক থাকুন।

 

গ্র্যাভিটি
পৃথিবীর স্বাভাবিক গ্র্যাভিটি আমাদের ত্বকের স্বাভাবিক এজিং এবং লুজ স্কিনের পেছনে অনেকটাই দায়ি। কমবয়সে আমাদের ত্বকের কোলাজেন আর স্বাভাবিক ইলাসটিসিটির কারণে এই নিম্নমুখী টান অতটা প্রভাব ফেলে না। কিন্তু কখন এই গ্রাভিটিও আপনার ২০ বছর বয়সেই ইফেক্ট দেখাতে শুরু করবে জানেন? যখন আপনি দিনে ৬-৭ ঘণ্টা সময় একই ভঙ্গিতে বসে থেকে কাটিয়ে দেবেন।তাই সোজা হয়ে বসুন। নিজের ফোন ব্যবহারের সময় আই লেভেলে তুলে আনুন। এমন ভাবে বসুন যাতে আপনার ঘাড়ে এবং থুতনির নিচে ভাঁজ না পড়ে।অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যাবহারের কারণে চোয়ালের অংশ, গলা এবং ডাবল চিনের খুলে যাওয়া এবং এই অংশে রিংকেল পড়ে। তাই অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যাবহার থেকে বিরত থাকুন। 

ঘুমের অভাব
দেহের স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী রাত ১০ টা থেকে দেহের মেরামত কার্যক্রম শুরু হয়। কিন্তু আপনার রাত জাগার অভ্যাস বছরের পর বছর চলার কারণে একসময় এই হরমোনগুলোর ক্ষমতা স্থায়ীভাবে নষ্ট হয়ে যায়। আর আপনার এই ভুলের জন্যই একটা শুকনো ম্যাড়ম্যাড়ে ত্বক হয় যা ফাইন লাইনে ভর্তি। তাই শরীরকে ঘুমের জন্য তৈরি করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। রোজ ৬ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুমোতেই হবে। অতিরিক্ত ফ্লুরসেন্ট আলো স্বাভাবিক ঘুমের সাইকেলকে নষ্ট করে। তাই নিজের ফোনে নাইট লাইট সেটিং ইউজ করবেন, পিসি ইউজ করলে সেটাতেও একই সেটিং চালু করে রাখবেন। এতে ব্রেন ব্লু লাইটের কারণে ঘুমাতে বাঁধা পাবেনা। সন্ধ্যার পর ফ্লুরোসেন্ট বাতি জ্বালাবেননা। শুধু ইয়েলো লাইট ইউজ করবেন। হাতের কাছে ল্যাভেন্ডার এসেনশিয়াল অয়েল রাখতে পারেন। ১ ফোঁটা বালিশে দিয়ে রাখবেন। ল্যাভেন্ডারের ঘ্রাণ স্ট্রেস কমায়, ঘুমাতে সাহায্য করে। মনে রাখবেন, এক রাতের ঘুম ১০ হাজার টাকার কসমেটিক থেকেও ভালো কাজ করে। আর সেই ঘুমটাকে যতটা গভীর করা যায় ততই ভালো। এতে একইসঙ্গে সুস্থ দেহ সুন্দর ত্বক, দুইই পাবেন।