রঙে রঙিন বৈশাখের প্রস্তুতি
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ০৯:১৮ এএম, ১৩ এপ্রিল ২০১৯ শনিবার
‘পয়লা বৈশাখ’ এ যেন বাঙালির শিকড়ের শব্দ। নববর্ষ উদযাপনে বাঙালি সংস্কৃতির রঙে ঢঙে মাতোয়ারা হয়ে উঠেছে খুলনা জেলা। বর্ষবরণে রয়েছে নানা আয়োজন। সকালের সূর্যের আলো চারদিক ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গেই ঢাক-ঢোলের আওয়াজে প্রকম্পিত হবে নগরীর আশপাশ।
এদিকে বৈশাখ উপলক্ষে শেষ মুহূর্তে জমে উঠেছে খুলনার বিপণিবিতান ও মার্কেটগুলো। নতুন বছরকে বরণ করতে নানা বৈচিত্র্যময় পোশাকের পসরা বসেছে দোকানগুলোতে। কেনাকাটাও চলছে পুরোদমে।
পোশাক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে বাঙালির ঐতিহ্যবাহী শাড়ি আর পাঞ্জাবিকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন ক্রেতারা। অন্যদিকে নিজস্ব ডিজাইনে তৈরি পোশাক দিয়ে ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টার কমতি নেই ফ্যাশন হাউসগুলোতেও।
বর্ষ বরণের পোশাক কিনতে আসা অধিকাংশ নারীই জানালেন পয়লা বৈশাখে শাড়িকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন তারা। তবে কিশোরীদের পছন্দের তালিকায় আছে নানা ডিজাইনের টপস।
এছাড়া পাঞ্জাবি বা ফতুয়া ছাড়া পয়লা বৈশাখটা যেন জমে না ছেলেদের। তাই ঘুরেফিরে হাত চলে যায় লাল-সাদা পাঞ্জাবি ও ফতুয়ার দিকে।
নগরীর ফ্যাশন হাউসগুলো নিয়ে এসেছে শৈল্পিক ডিজাইনের সব পোশাক। হাউসগুলোতে মেয়েদের জন্য রয়েছে থ্রি পিস, শার্ট টপস, লং টপস, শাড়ি, সালোয়ার কামিজ, ওড়না, প্লাজু ইত্যাদি। পাশাপাশি রয়েছে ছেলেদের পাঞ্জাবি, টি-শার্ট, ফতুয়া, ধুতি পাজামা ও বাচ্চাদের নানা শৈল্পিক পোশাক। এসব পোশাকের বেশিরভাগেই প্রাধান্য পেয়েছে লাল, সাদা, হলুদ ছাপ।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাঙালির প্রাণের উৎসব হওয়ার কারণে এর আমেজ প্রতিবছরই বাড়ছে। ঈদ বা পূজা উৎসবকে বাংলাদেশে ভিন্ন ভিন্ন চোখে দেখা হলেও এ উৎসব সবার জন্য। তাই এ উৎসবে মুসলিম–হিন্দু সবাই সমানভাবে কেনাকাটায় উৎসাহী হয়।
খুলনা শপিং কমপ্লেক্সের দ্বিতীয় তলার চয়েজ কালেকশনের দোকানি এসএম আক্তারুজ্জামান নিশাত বলেন, বৈশাখ উপলক্ষ্যে নতুন নতুন পাঞ্জাবি এনেছি। ক্রেতার সমাগম অনেক বেশি। শেষ সময়ে বেচাকেনাও ভালো।
এম রহমান নামের এক ক্রেতা জানান, ছোট ভাইকে বৈশাখের পোশাক কিনে দিতে বাজারে আসা। কিন্তু মার্কেটে এসে দেখছি পোশাকের দাম গত বছরের তুলনায় বেশি।
এদিকে কাপড়ের মার্কেটের ন্যায় মাটির তৈজসপত্র ও ইলিশের বাজারও ক্রেতা সরগরম। মাটির থালা-বাসন, জগ, কাপ-পিরিচ, শোপিস, ফুলদানি, ল্যাম্পশেড, মোমদানি ও বিভিন্ন তৈজসপত্রের পসরা সাজিয়ে বসেছেন অনেকে।
দোকানিরা বলেন, মাটির হাঁড়ি, থালা-বাসন থেকে শুরু করে ফুলদানি পর্যন্ত নানা ধরনের ডিজাইনের পণ্য দিয়ে বৈশাখে অনেকে ঘর সাজান। এসব পণ্যের দাম ৩০ টাকা থেকে শুরু করে দেড় হাজার টাকার মধ্যে। ভালো মাটির থালাগুলো পাওয়া যাচ্ছে ৯০ থেকে ১৫০ টাকা, মাটির গ্লাস ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বিভিন্ন রকমের বাটি পেয়ালা ৬০ থেকে ২০০ টাকার মধ্যে।
রূপালি ইলিশের দাম বাড়ায় ক্রেতা-বিক্রেতাদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। বিক্রেতারা বলছেন, এখন ইলিশের মৌসুম না হওয়ায় সব ধরনের ইলিশের দাম বেড়েছে। অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, প্রতিবছর বাংলা নববর্ষের আগে অতি মুনাফার আশায় দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা।
দেড় কেজি ওজনের একেকটি ইলিশের দাম প্রায় আড়াই থেকে তিন হাজার টাকা। ক্রেতারা জানান, এক কেজি বা এক কেজি ৩শ’ গ্রাম সাইজের ইলিশের কেজি ২২শ’ থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যেগুলো এক সপ্তাহ আগে দেড় হাজার থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে।
কেসিসি রূপসা পাইকারি মৎস্য আড়তে মুজাহিদ ফিসের আড়তদার আবু মুসা বলেন, শেষ মুহূর্তে এসে ইলিশের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে।
এদিকে বছরের প্রথম দিন খুলনার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে এবারো পালন করা হবে হালখাতা উৎসব। এ উৎসবকে সামনে রেখে শেষ মুহূর্তে প্রস্তুতি নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।
এবার প্রায় ছোটবড় প্রায় ছয় শতাধিক প্রতিষ্ঠানে হালখাতা উৎসবের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। বৈশাখের জন্য প্রতিষ্ঠানগুলোকে বিভিন্ন রঙের কাগজের তৈরি ঝালর, কুলা, ঢোল ইত্যাদি জিনিসপত্রে সাজিয়ে তোলা হচ্ছে ৷
জেলা জুয়েলারি মালিক সমিতির সভাপতি নিতাই চন্দ্র ভৌমিক বলেন, বড়বাজারসহ নগরীতে ১২০-১৩০টিসহ জেলায় পাঁচ শতাধিক ছোট-বড় জুয়েলারি দোকান হালখাতা উৎসবের আয়োজন করে থাকে। যারা এবারো প্রস্তুতি নিয়েছে।
তিনি বলেন, হালখাতা মূলত খুলনার বড় বাজার কেন্দ্রিক রয়েছে। এখনো এখানকার দোকানগুলো হালখাতা উৎসবের আয়োজন করে।
খুলনা ধান চাল বণিক সমিতির সভাপতি মনির আহমেদ বলেন, বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির ছোঁয়ায় হালখাতার জৌলুসে ভাটা পড়েছে। ব্যবসায়ীর সংখ্যাও কমেছে। তারপরো খুলনার ২৫-৩০ জন ধান চাল ব্যবসায়ী এবারো হালখাতার আয়োজন করেছেন।
এছাড়া নগরীর জাতিসংঘ শিশুপার্কে তিন দিনের বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। পয়লা বৈশাখ থেকে এ মেলা শুরু হবে।
