বৃহস্পতিবার   ১৪ আগস্ট ২০২৫   শ্রাবণ ৩০ ১৪৩২   ১৯ সফর ১৪৪৭

নিরাপত্তা ঝুঁকি প্রমাণের আহ্বান হুয়াওয়ের

নিউজ ডেস্ক

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৫:০২ এএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ সোমবার

বহুজাতিক নেটওয়ার্ক ও টেলিকম সরঞ্জাম নির্মাতা হুয়াওয়ে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বাজারে পণ্যের নিরাপত্তা নিয়ে সংকটে পড়েছে। চলমান ইস্যুকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রসহ যেসব দেশ পঞ্চম প্রজন্মের ফাইভজি নেটওয়ার্ক অবকাঠামো নির্মাণে হুয়াওয়ের সরঞ্জাম বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে, তাদের চ্যালেঞ্জ জানিয়েছে চীনভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটি। নেটওয়ার্ক সরঞ্জামের নিরাপত্তা ঝুঁকি প্রমাণের আহ্বান জানিয়েছেন হুয়াওয়ের রোটেটিং চেয়ারম্যান কেন হু। খবর এপি।

হুয়াওয়ের সম্মেলনে কেন হুকে সচরাচর দেখা যায় না। সম্প্রতি পণ্যের নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান কার্যালয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও এশিয়ার সাংবাদিকদের সঙ্গে ২ ঘণ্টা ২০ মিনিটের বেশি সময় কথা বলেন তিনি। এ সময় পণ্যে নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে এমন অভিযোগে জড়ানোর বিরোধিতা করেন তিনি। কেন হু দাবি করেন, তাদের পণ্যের মাধ্যমে চীন সরকারের হাতে বিভিন্ন দেশের নাগরিকদের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যাচ্ছে, এখন পর্যন্ত কেউ এমন প্রমাণ দিতে পারেনি। কাজেই তাদের নেটওয়ার্ক সরঞ্জামের নিরাপত্তা নিয়ে যা কিছু বলা হচ্ছে, তার সবই ভ্রান্ত ধারণা। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তাদের বৈশ্বিক ফাইভজি নেটওয়ার্ক নির্মাণে পিছিয়ে রাখার চেষ্টা করা হচ্ছে।

বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম নির্মাতা হুয়াওয়ে টেকনোলজিস কোম্পানি লিমিটেড। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের জেরে প্রতিষ্ঠানটি খারাপ সময় পার করছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের দাবি, হুয়াওয়ের টেলিকম সরঞ্জাম কিংবা ডিভাইস ব্যবহার করলে তথ্য চুরির আশঙ্কা রয়েছে, যা জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি। প্রতিষ্ঠানটির ওপর চীন সরকারের প্রভাব রয়েছে। এর নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম কিংবা ডিভাইস ব্যবহার করলে চীন সরকার যুক্তরাষ্ট্র কিংবা যেকোনো দেশের ওপর গোয়েন্দাগিরির সুযোগ পাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের পর একই অভিযোগে অস্ট্রেলিয়ার বাজার হারিয়েছে হুয়াওয়ে। ফাইভজি নেটওয়ার্কের সরঞ্জাম সরবরাহের জন্য দরপত্র আহ্বান করেছে দেশটি। এতে অংশ নেয়ার কথা থাকলেও নেটওয়ার্কিং সরঞ্জামের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ থাকায় শেষ পর্যন্ত হুয়াওয়ের পণ্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দাবি, অন্য দেশের ওপর গোয়েন্দাগিরি করতে চীন স্থানীয় কোম্পানিগুলোকে বাধ্য করছে। যে কারণে হুয়াওয়ে তাদের সরঞ্জামের মাধ্যমে অন্য দেশের নাগরিকদের ওপর নজরদারি করছে এবং চীন সরকারের কাছে তথ্য হস্তান্তরে বাধ্য হচ্ছে।

শুধু যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ায়ই নয়, নেটওয়ার্ক সরঞ্জামের নিরাপত্তা ইস্যু নিয়ে ফ্রান্স, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, জাপানের মতো গুরুত্বপূর্ণ টেলিকম বাজারে খারাপ সময় পার করছে হুয়াওয়ে। এসব দেশ ফাইভজি নেটওয়ার্ক অবকাঠামো নির্মাণে হুয়াওয়ের পণ্য বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।

১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত হুয়াওয়ে চীনের প্রথম প্রযুক্তি কোম্পানি, যা এরই মধ্যে বৈশ্বিক প্রতিদ্বন্দ্বীতে পরিণত হয়েছে। বিশেষ করে, বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক সরঞ্জাম খাতে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করে আছে প্রতিষ্ঠানটি। এছাড়া বৈশ্বিক স্মার্টফোন বাজারে অ্যাপলকে হটিয়ে দ্বিতীয় স্থানে জায়গা করে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। চলতি বছর এর বার্ষিক বিক্রির পরিমাণ ১০ হাজার কোটি ডলার অতিক্রম করবে। বিশ্বব্যাপী এর কর্মীসংখ্যা ১ লাখ ৮০ হাজার।

কেন হু দাবি করেন, কাল্পনিক যুক্তি ও ভূরাজনৈতিক কারণে বৈশ্বিক ফাইভজি নেটওয়ার্ক অবকাঠামো নির্মাণে হুয়াওয়েকে পিছিয়ে রাখা হলে ভোক্তারা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। নেটওয়ার্ক সরঞ্জামের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি টেলিকম খাত উদ্ভাবনের দিক থেকে পিছিয়ে পড়বে।

দ্য সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ ইন ওয়াশিংটনের বিশ্লেষক স্কট কেনেডি বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাষ্ট্রের মতাদর্শে প্রভাবিত হয়ে যেসব দেশ হুয়াওয়ের সরঞ্জামের নিরাপত্তা নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, তাদের উচিত এ বিষয়ে তথ্যপ্রমাণ উপস্থিত করা। কারণ চলমান ইস্যুকে কেন্দ্র করে বিশ্বব্যাপী তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি বলেন, হুয়াওয়ের সরঞ্জামের নিরাপত্তা নিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি যুক্তরাষ্ট্র থেকে। এক্ষেত্রে দেশটির উচিত আশঙ্কার পক্ষে তথ্যপ্রমাণ জনসমক্ষে প্রকাশ করা। চীনকে সন্তুষ্ট করার জন্য নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদেরই আত্মতুষ্টির জন্য এটা করা উচিত।