শুক্রবার   ১৬ মে ২০২৫   জ্যৈষ্ঠ ২ ১৪৩২   ১৮ জ্বিলকদ ১৪৪৬

অজ্ঞাত এইচআইভি কেস শনাক্তকরণে পদক্ষেপ

নিউজ ডেস্ক

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৪:৫০ এএম, ২৪ ডিসেম্বর ২০১৮ সোমবার

এইচআইভি প্রতিরোধ ও চিকিৎসা নিশ্চিতকরণে স্বাস্থ্য অধিদফতরের জাতীয় এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রাম তথা বাংলাদেশ সরকার জাতিসংঘের Fast track strategy 90-90-90 গ্রহণ করেছে, যার লক্ষ শতকরা ৯০ ভাগ সম্ভাব্য এইচআইভি আক্রান্তকে চিহ্নিত করা, চিহ্নিত ব্যক্তিদের শতকরা ৯০ ভাগকে চিকিৎসাসেবার আওতায় আনা ও চিকিৎসাধীনদের শতকরা ৯০ ভাগের ভাইরাসের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত রাখা।

এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রামের তথ্যানুযায়ী আগষ্ট, ২০১৮ পর্যন্ত দ্বিতীয় ৯০-এর ৮৪ ভাগ অর্জন করা সম্ভব হলেও প্রথম ও তৃতীয় ৯০ অর্জন প্রত্যাশা অনুযায়ী সম্ভব হয়নি। এ লক্ষ্য অর্জনে জাতীয় এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রাম গুরুত্বের সঙ্গে কাজ করছে।

এ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য জাতীয় এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রাম এর মধ্যে ৪র্থ স্বাস্থ্য, পরিবার পরিকল্পনা ও নিউট্রিশন সেক্টর কর্মসূচির আওতায় অনুমোদিত টিবি-এল অ্যান্ড এএসপি অপারেশনাল প্লানে কার্যক্রম সন্নিবেশিত করেছে।

জাতীয় এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রাম ও ইউএনএইডসের তথ্যমতে বর্তমানে দেশে ১৩,০০০ এর মতো সম্ভাব্য এইচআইভি কেস আছে, যাদের মধ্যে ৫৫৮৬ জনকে পরীক্ষার মাধ্যমে শনাক্ত করা হয়েছে। দেশে এইচআইভি প্রতিরোধ করতে এবং এসডিজি গোল (২০৩০ সালের মধ্যে এইডস নির্মূল) অর্জনে অজ্ঞাত/লুকায়িত এইচআইভি কেসগুলো শনাক্ত করা জরুরি।

এ পরিপ্রেক্ষিতে এইডস/এসটিডি প্রোগ্রাম এইচআইভি টেস্টিং ও কাউন্সেলিং সেবা জোরদার ও সম্প্রসারণ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।

জাতীয় এইডস/এসটিডি প্রোগ্রাম ও ইউএনএইডস যৌথভাবে ইনভেস্টমেন্ট প্লান স্টাডির মাধ্যমে এইচআইভি কর্মসূচির জন্য দেশের অগ্রাধিকার জেলাগুলো চিহ্নিত করে থাকে। প্রতিবছর দেশের জেলাগুলোতে কতজন নতুন এইচআইভি কেস শনাক্ত হচ্ছে, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা কত ইত্যাদি বিবেচনা করে মূলত অগ্রাধিকার জেলা চিহ্নিত করা হয়।

সর্বশেষ ইনভেস্টমেন্ট কেস স্টাডি অনুযায়ী ঢাকাসহ দেশের ২৩টি জেলাকে নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে উল্লিখিত ২৩টি জেলার ২৫টি সরকারি হাসপাতালে এইচআইভি টেস্টিং ও কাউন্সেলিং (এইচটিসি) সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। পূর্ব থেকেই ৫টি জেলার ৬টি হাসপাতালের মাধ্যমে এইচআইভি পরীক্ষা ও আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা প্রদান অব্যাহত আছে।

সম্প্রতি এসব সেবা কেন্দ্রের কার্যক্রম শক্তিশালীকরণের লক্ষ্যে একাধিক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। সরকারি হাসপাতালের এইচটিসি সেন্টারগুলোর কার্যক্রম শুরু করার জন্য এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রাম যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে তা নিুরুপ;

* বিগত মে-সেপ্টেম্বর, ২০১৮ পর্যন্ত অগ্রাধিকার ভিত্তিক ২৩টি সরকারি হাসপাতালে দিনব্যাপী কর্মশালার আয়োজন করা হয়েছিল। এই কর্মশালায় হাসপাতালের পরিচালক/ তত্ত্বাবধায়ক, বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসক, সিভিল সার্জন, বিভাগীয় পরিচালক (স্বাস্থ্য), বিএমএ প্রতিনিধি, গণমাধ্যম কর্মী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান/এনজিও কর্মী এবং কর্মশালায় উপস্থিত অন্য সদস্যদের আলোচনার মাধ্যমে হাসপাতালে এইচটিসি সেন্টার স্থাপন ও পরিচালনায় করণীয় নির্ধারণ করা হয়।

* এইচটিসি সেন্টারের জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ, ইকুপমেন্ট ও অন্যান্য সামগ্রী এর মধ্যে প্রেরণ করা হয়েছে।

* হাসপাতালগুলোর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে এইচআইভি টেস্টিং অ্যান্ড কাউন্সেলিং, এআরটি ম্যানেজমেন্ট, রেকর্ডকিপিং ও রিপোর্টিং বিষয়ক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়েছে এবং প্রয়োজনীয় ফরম/ ফরমেট/ রেজিস্টার প্রদান করা হয়েছে। প্রশিক্ষণে মূলত চিকিৎসক, এমটি ল্যাব, সেবিকা, পরিসংখ্যানবিদরা অংশগ্রহণ করেন।

* প্রতিটি হাসপাতালে প্রয়োজনীয় পরিমাণ র‌্যাপিড টেস্ট কিট প্রেরণ করা হয়েছে।

নতুনভাবে স্থাপিত এইচটিসি সেন্টারগুলোর মধ্যে টেস্টিং শুরু করেছে। এ কেন্দ্রগুলোর মাধ্যমে বিনামূল্যে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠী, সাধারণ জনগোষ্ঠী, অভিবাসীসহ সবার এইচআইভি পরীক্ষা ও কাউন্সেলিং করা হয়। শনাক্তকৃত নতুন কেস রেফারেলের নির্দেশনাও এইচটিসি সেন্টারগুলোকে প্রদান করা হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরে এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রাম’র তত্ত্বাবধানে ও দ্য গ্লোবাল ফান্ডের সহায়তায় সেভ দ্য চিলড্রেন ও আইসিডিডিআর.বি সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে এইচআইভি প্রতিরোধ সেবা দিয়ে আসছে।

বর্তমানে ১০৩টি ড্রপ ইন সেন্টার/ সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে নারী যৌনকর্মী, শিরায় মাদক গ্রহণকারী, সমকামী ও হিজড়াদের সেবা প্রদান করছে। এসব ডিআইসিতে ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর এইচআইভি পরীক্ষা করা হয় এবং সম্প্রতি প্রতিটি বাস্তবায়নকারী এনজিওকে অজ্ঞাত সংখ্যক কেস শনাক্ত করতে তাদের লক্ষ্যমাত্রা বৃদ্ধি করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

সেফ ব্লাড ট্রান্সফিউশন অ্যাক্ট ২০০২ অনুযায়ী রক্ত পরিসঞ্চালনে এইচআইভি স্ক্রিনিং বাধ্যতামূলক। সরকারি ব্যবস্থাপনায় দেশের সব জেলা হাসপাতাল, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ মোট ৯৭ ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেন্টার এইচআইভি স্ক্রিনিং করছে।

এছাড়া বেসরকারি/ প্রাইভেট প্রতিষ্ঠানগুলোও ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগে এইচআইভি স্ক্রিনিং করা হয়। এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রাম এসব প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কার্যকরী যোগাযোগ স্থাপন এবং স্ক্রিনিংয়ের মাধ্যমে প্রাপ্ত সব এইচআইভি কেস কনফার্মেটরি টেস্টে অন্তর্ভুক্ত করে চূড়ান্ত পরীক্ষা সম্পন্ন করার নির্দেশনা প্রদান করেছে।

সেফ ব্লাড ট্রান্সফিউশন বিভাগের কাছ থেকে প্রাপ্ত আক্রান্তদের তথ্য সম্বলিত প্রতিবেদন এইচআইভি কেস শনাক্তকরণ কার্যক্রমকে আর এক ধাপ এগিয়ে নিয়ে যাবে।

এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রাম এইচআইভি কেস শনাক্তকরণ ও তাদের চিকিৎসাসেবায় অন্তর্ভুক্ত করতে সরকারের অন্যান্য বিভাগের সঙ্গে নিয়মিত সমন্বয় করছে। গালফ অ্যাপ্র“ভড মেডিকেল সেন্টার অ্যাসোসিয়েশন (গামকা) একটি জাতীয় পর্যায়ের প্রতিষ্ঠান, যার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যগামী সব সম্ভাব্য প্রবাসীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা সাপেক্ষে সনদ প্রদান করে থাকে।

যা তাদের বিদেশ যাত্রার পূর্বশর্ত এবং স্বাস্থ্য পরীক্ষার মধ্যে অন্যতম হল এইআইভি পরীক্ষা। প্রতি বছর গামকা অনুমোদিত ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ৭ লাখের মতো এইচআইভি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়।

এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রাম গামকার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছে যাতে সব পজিটিভ কেসের তথ্যাদি জাতীয় প্রোগ্রামের নিকট সংরক্ষিত থাকে এবং চিকিৎসাসেবার আওতায় অন্তর্ভুক্ত করা যায়।

উল্লিখিত উদ্যোগ এবং পদক্ষেপগুলো অজ্ঞাত এইচআইভি কেস শনাক্তকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে যা আমাদের প্রথম ৯০ অর্জনে সহায়ক হবে। এক্ষেত্রে সরকারি, বেসরকারি, উন্নয়ন সহযোগী সব প্রতিষ্ঠানকে একযোগে কাজ করতে হবে।

লেখক : ডা. মো. বেলাল হোসেন
উপপরিচালক ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার
জাতীয় এইডস/এসটিডি কন্ট্রোল প্রোগ্রাম
স্বাস্থ্য অধিদফতর, মহাখালী, ঢাকা