শুক্রবার   ২৬ ডিসেম্বর ২০২৫   পৌষ ১২ ১৪৩২   ০৬ রজব ১৪৪৭

কোন রাস্তায় মঙ্গল শোভাযাত্রা?

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ০৮:৩৬ এএম, ১০ এপ্রিল ২০১৯ বুধবার

বাঙালির দোয়ারে এসে দাঁড়িয়েছে আরো একটি নতুন বছর। আর পাঁচদিন পরই বাঙালি মাতবে বর্ষবরণের আনন্দে। সাজবে বাহারি রঙের সাজে। তাই নতুন বছরকে বরণ করে নিতে এখন দারুণ ব্যস্ত সময় পার করছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চরুকলা অনুষদ। উপলক্ষ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা।

বাংলা বর্ষবরণে মঙ্গল শোভাযাত্রা এখন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। নান্দনিক এই আয়োজন ছাড়া নতুন বছরকে স্বাগত না জানালে যেন পানসে হয়ে যায় সব আয়োজন। তাই প্রতি বছরের প্রথম সূর্যোদয়ে চারুকলার গেট থেকে বের হয়ে রূপসী বাংলা হোটেল (বর্তমান ইন্টারকন্টিনেন্টাল) পর্যন্ত নানা রকমের মুখোশ ও শিল্পকর্ম নিয়ে মিছিল বের করে শিল্পী-বুদ্ধিজীবী ও ছাত্র-জনতা। তবে এ বছর মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়ে দেখা দিয়েছে সংশয়!

 

শাহবাগ থেকে রূপসী বাংলা হোটেল পর্যন্ত রাস্তাটি খুড়ে রাখা হয়েছে মেট্রোরেলের কাজের জন্য। চারুকলার সামনে থেকে টিএসসি পর্যন্তও চলছে কাজ। তাহলে এবার কি রাস্তা বদলাবে মঙ্গল শোভাযাত্রার?

চারুকলা অনুষদের অঙ্কন ও চিত্রকলা বিষয়ের শিক্ষক নিসার হুসেইন বলছেন, হ্যাঁ, এবার মঙ্গল শোভাযাত্রা রাস্তা পরিবর্তন করা হচ্ছে। এ বছরে আমরা রূপসী বাংলার দিকে না গিয়ে ঢাকা ক্লাব হয়ে রমনায় ঘুরে চারুকলায় ফিরবো। এই সিদ্ধান্ত আমরা আগেই নিয়েছি।

তিনি আরো বলেন, আগে বারডেমের ওখানে একটা উড়াল সেতু ছিলো। সেখান থেকে গণমাধ্যমের কর্মীরা ছবি নিতে পারতো। সেই উড়াল সেতুটা আর নেই। তাই ঢাকা ক্লাবের ওদিকে যাবো আমরা। সেখান থেকেই গণমাধ্যমের কর্মীরা ছবি ও ফুটেজ নিতে পারবে।

এতে করে কি মঙ্গল শোভাযাত্রার জৌলুশ কমবে? এ প্রশ্নের উত্তরে নিসার হুসেন বলেন, মোটেও না। আগে যতটুকো রাস্তা যেতাম এবারো ততটুকোই যাবো। আগের মতোই নান্দনিক হবে সবকিছু। আর সব সময় যে একই পথে হাঁটতে হবে সেই নিয়মও তো কোথাও বলা নেই। সময়ের প্রয়োজনে পরিবর্তন আসতেই পারে। 

 

এ ব্যাপারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর এ কে এম গোলাম রাব্বানী বলেন, ‘নতুন রাস্তায় এ বছরের মঙ্গল শোভাযাত্রা হচ্ছে। রমনার মূল আয়োজনের দিকে ঘুরে এসে চারুকলার গেটে থামবে মঙ্গল শোভাযাত্রা। বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে এই আয়োজনে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা দেয়া হবে। থাকবে সরকারি নিরাপত্তাও।’

এবারের শোভাযাত্রার শ্লোগান ঠিক করা হয়েছে ‘মস্তক তুলিতে দাও অনন্ত আকাশে’। এর জন্য মাছ, পাখি, পেঁচা, ছোট সরা, বড় সরা, পেপার মাস্ক, মুখোশ, মাস্কট, টেপাপুতুল, বাঘ, মা ও শিশুসহ নানা ধরনের শিল্পকর্ম তৈরি করা হচ্ছে। কিছু শিল্পকর্ম বিক্রি করে শোভাযাত্রার তহবিলও গঠন করতে হচ্ছে। ঐতিহ্য ও শেকড়ের টানের এমন আয়োজনকে সফল করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও উদার ভাবে সহযোগিতা করছে তাদের। 

‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’র তহবিল গঠনে জলরঙের পেপার ওয়ার্কসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে এক থেকে পাঁচ হাজার টাকা, শিক্ষকদের পেপার ওয়ার্কসের দাম ৫ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা। বড় সরার দাম ৫০০ থেকে ১ হাজার টাকা, ছোট সরা ২০০ থেকে ৫০০ টাকা। এ ছাড়া হাত পাখা, বিভিন্ন শো-পিস ১০০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। 

 

উল্লেখ্য, ১৯৮৯ সালে চারুকলা অনুষদের উদ্যোগে প্রথমবারের মতো আনন্দ শোভাযাত্রা বের করা হয়। এরপর এই আয়োজন বাংলা বর্ষবরণের অপরিহার্য উপাদান হয়ে উঠে। ১৯৯৬ সালে চারুকলার এই আনন্দ শোভাযাত্রাকে ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামকরণ করা হয়। ২০১৬ সালের নভেম্বরে জাতিসংঘের শিক্ষা, সংস্কৃতি ও বিজ্ঞান-বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কোর ‘ইনটেনজিবল হেরিটেজ’ হিসেবে স্বীকৃতি পায় মঙ্গল শোভাযাত্রা।