মঙ্গলবার   ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫   ভাদ্র ৩১ ১৪৩২   ২৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

নীল জিন্সের অজানা তথ্য

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১১:৫২ এএম, ৬ এপ্রিল ২০১৯ শনিবার

জিন্স শব্দটির ব্যবহার শুরু হয় ১৮০০ সালের দিকে। পাজামা বানানোর তির্যক সেলাই করা কাপড়কে বলা হতো জিন্স। কিন্তু টেক্সটাইলগুলোতে যে পোশাক বানানোর জন্যে এই কাপড় ব্যবহৃত হতো তা মিশিয়ে ফেলে। নীল জিন্স, যেটি এখন ডেনিম নামে পরিচিত তা মূলত এই ফেব্রিক দিয়ে ফ্রান্সের নিম শহরে তৈরি হতো। ডেনিম নামটি ফ্রান্সের টেক্সটাইলের ইংরেজিকরণের মাধ্যমে এসেছে, নাকি ইতোমধ্যে থাকা কোনো ইংরেজ পণ্যের প্রতিপত্তি বাড়াতে দেয়া হয়েছে তা নিয়ে এখন বিতর্ক রয়েছে। 

 

বিংশ শতাব্দী নাগাদ, জিন্স শব্দটি নানা প্রকার কটন এবং আটপৌরে ডেনিম পাজামাকে বোঝাতে ব্যবহার করা শুরু হয়। জানা যায়, ক্ল্যাসিক জিন্স তৈরি হতো বেগুনি নীল বর্ণের রঙ করা ডেনিম ব্যবহার করে। এতে থাকতো পকেট এবং গঠন হতো বলিষ্ঠ, যা শারীরিক পরিশ্রমের কাজ করার মত উপযোগী পোশাক। ১৮৭৩ সালে এই জিন্সের প্যাটেন্ট করেন জ্যাকব ডেভিস, যিনি ছিলেন একজন দর্জি এবং লেভি স্ট্রাউস, যিনি স্যান ফ্রান্সিস্কোর একটি পাইকারি ফেব্রিকের দোকানের মালিক। তামার পিন দিয়ে তৈরি রিভেট বোতামগুলো কর্মীদের প্রশংসা কুড়োয়। কারণ, তাদের কাজের মধ্যে মাঝে মাঝেই পকেট ছিঁড়ে যেতো।

 

শুরুতে ডেভিস এবং লেভি দুই ধরনের জিন্স বানাতেন। একটি বাদামী এবং অন্যটি নীল। ১৮৯০ সালে ডেনিম ৫০১ নামে একটি নতুন নীল রঙের ডিজাইন বাজারে ছাড়ার মাধ্যমে এটি অনেক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। আর এখনকার জিন্স প্যান্টগুলোতে যে বেল্ট লুপ বা ফাঁদ দেখা যায়, সেটি প্রথম ১৯২২ সালে যুক্ত হয়। এছাড়াও বর্তমানে যে চেইন জিপারগুলো দেখি সেটি ব্যবহার শুরু হয় ১৯৫৪ সালে। শুরুতে শুধু ডেভিস এবং লেভি এই জিন্স বানাতে পারতো। কিন্তু, ১৮৯০ সালে তাদের প্যাটেন্টের মেয়াদ শেষ হয়। ফলে, অন্যান্য প্রস্তুতকারকরাও জিন্স উৎপাদন শুরু করেন। 

পর্যায়ক্রমে ১৮৯৫ সালে অশকোশ বি’গশ, ১৯০৪-এ ব্লু বেল এবং ১৯১১ সালে লী মারকেন্টাইল জিন্সের বাজারে প্রবেশ করে। প্রথম বিশ্বযুদ্ধে লী এর বানান জিন্সগুলোকে যুদ্ধের কর্মীদের জন্যে আদর্শ মানা হতো। ১৯২০ এবং ’৩০ এর দশকে হলিউড জিন্সের সমাদর আরো বাড়াতে সহায়তা করে। জন ওয়েন কিংবা গ্যারি কুপারের মত অভিনেতাদের করা সুদর্শন কাউবয় চরিত্রগুলো জিন্স ব্যবহার করায়, জনসাধারণের কাছে জনপ্রিয়তা বাড়ে জিন্সের। জিঞ্জার রোজারস এবং ক্যারোল লমবার্ড এর মত নায়িকারা জিন্স পরিধানের প্রচারনার ছবিতে অংশ নিলে, নারীদের মধ্যেই এটি জনপ্রিয় হওয়া শুরু করে। মারলন ব্র্যান্ডো আর জেমস ডিন ডেনিমকে যৌন আবেদনময় এবং “কুউল” হিসেবে পরিচিত করতে সক্ষম হন। 

 

১৯৬০ এবং ১৯৭০ এর শুরুর দিকে হিপ্পি ও যুদ্ধ বিরোধীরা জিন্স পড়া শুরু করে। এর মাধ্যমে তারা শ্রমিকশ্রেণীর প্রতি তাদের সমর্থন প্রকাশ করে। সমসাময়িক কালে, নারীবাদীরা নীল জিন্স পরিধান শুরু করে লিঙ্গসমতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে। ১৯৬০ সাল নাগাদ জিন্স একটি সংস্কৃতি বিরোধী এবং প্রতিবাদের চিহ্ন হিসেবে পরিচিত হতে শুরু করে। কিছু কলেজ বিশ্ববিদ্যালয় আবার জিন্সকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। কিন্তু, এতে জিন্সের জনপ্রিয়তা আরো বেড়ে যায়। সত্তর এবং আশির দশকে জিন্স একটি ফ্যাশনের প্রতীক হিসেবে বিকাশ পাওয়া শুরু করে। ফিউরুচি বুফালো ৭০ জিন্সগুলো ছিল আঁটসাঁট, কালো, দামী এবং ক্রয় দুঃসাধ্য। এক কথায়, তরুন জনগোষ্ঠীর পছন্দের ম্লান জিন্সের একেবারে বিপরীত। 

নব্বই এর দশক থেকে বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজ যেমন ভারসেস, ডলচে এন্ড গ্যাবানা এবং ডিওর, জিন্সের বাজারে প্রবেশ করে। দশকজুড়ে, বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে জিন্স জনপ্রিয় হয়। ৯০ দশকের প্রাক্কালে, ঢোলা, ঝুলে থাকা, থলে আকৃতির জিন্সগুলো হিপ-হপ শৈলীর অংশ হয়। পপ-স্টারদের প্রিয় ছিল ডিসেলের জুলপি যুক্ত জিন্সগুলো। ধনী ভক্তরা ভিন্টেজ লেভিস জিন্সের জন্য অনেক অর্থ খরচ করতো। এছাড়াও জাপানী হাতে রঙ করা জিন্স গুলোও ছিল উচ্চমূল্যের।

বর্তমানে, সব বিলাসী পণ্য নির্মাতারাই জিন্স তৈরি করছে। সস্তা থেকে দামী, সকল মূল্যশ্রেণীতেই এখন পাওয়া যায় জিন্স বা ডেনিম। নানা ধরনের ডেনিম রয়েছে বাজারে- ঢোলা, আঁটসাঁট, হালকা, কালো, রঙ্গিন আরো নানা প্রকারের। ফরাসী ফ্যাশন ডিজাইনার ইভেস সেইন্ট লরেন্ট ১৯৮৩ সালের নভেম্বরে নিউ ইয়র্ক ম্যাগাজিনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘মাঝেমাঝেই বলি, আমি যদি নীল জিন্স আবিষ্কার করতাম! কারণ, এতে আছে অভিব্যক্তি, বিনয়, যৌন আকাঙ্ক্ষা এবং সরলতা। আর এগুলোই আমি, নিজ পোশাকের মধ্যে আশা করি’।