বৃহস্পতিবার   ২০ নভেম্বর ২০২৫   অগ্রাহায়ণ ৫ ১৪৩২   ২৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৭

গণফোরামেও ড. কামাল হোসেনকে নিয়ে সন্দেহ

নিউজ ডেস্ক:

আমাদের নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত : ১১:৩৭ এএম, ৪ এপ্রিল ২০১৯ বৃহস্পতিবার

সরকারবিরোধী প্রধান রাজনৈতিক জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের সংসদে যোগদানসহ বিভিন্ন ইস্যুতে জোটের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেনের ভূমিকা নিয়ে এবার তার দল গণফোরামেও সন্দেহ দানা বেঁধেছে। ৩০ ডিসেম্বরের সংসদ নির্বাচনের আগে থেকেই ফ্রন্টের প্রধান শরিক বিএনপির নেতারা এসব ইস্যুতে তার নেতৃত্ব ও ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে আসছিলেন। 

বুধবার গণফোরামের কয়েকজন নেতা দলের সভাপতির ভূমিকা নিয়ে ড. কামালকে সন্দেহ গণফোরামেও সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, তিনি আসলে যে কী করছেন তা বোঝা যাচ্ছে না। বিশেষ করে গণফোরামের প্রেসিডিয়াম মেম্বার এম মোকাব্বির খান শপথ নেয়ার পর দ্রুত তার বিষয়ে দলীয়ভাবে কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়ায় তারা তাকে নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করতে শুরু করেছেন। কেননা মোকাব্বিরের শপথ গ্রহণের মধ্য দিয়ে গণফোরামের নির্বাচিত দুজনেরই শথপ নেয়া সম্পন্ন হলো। যেখানে ফ্রন্টের প্রধান শরিক বিএনপির ছয়জনের শপথ নেয়ার বিষয়টি এখনো পরিষ্কার নয়।
 
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী জানান, দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে মোকাব্বির খান শপথ নিলেও তার বিষয়ে ড. কামাল হোসেন কেন যে সিদ্ধান্ত দিচ্ছেন না তা তিনি কিছুতেই বুঝতে পারছেন না। মোকাব্বির দাবি করেছেন ড. কামালের সবুজ সংকেত পেয়েই গত মঙ্গলবার শপথ নিয়েছেন তিনি। তবে আসলেই ড. কামাল তাকে সবুজ সংকেত দিয়েছেন কি না তা নিয়ে গণফোরাম নেতারা দ্বিধায় আছেন।

দলীয় সিদ্ধান্ত উপেক্ষা করে সাংসদ হিসেবে শপথ নেওয়া গণফোরামের আরেক নেতা সুলতান মোহাম্মদ মনসুরের প্রসঙ্গ টেনে সুব্রত চৌধুরী বলেন, সুলতান মনসুর দলের তেমন গুরুত্বপূর্ণ নেতা ছিলেন না। তিনি শপথ নেয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। আর মোকাব্বির খান প্রেসিডিয়াম মেম্বার। তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে এত সময় লাগতে পারে না। সন্দেহটা এ কারণেই।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণফোরামের এক প্রেসিডিয়াম মেম্বার বলেন, গত ৭ মার্চ সকালে সুলতান মোহাম্মদ মনসুর শপথ নেন। সন্ধ্যায় তাকে গণফোরাম ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়েছিলেন ড. কামাল হোসেন। এমনকি সুলতান মনসুর শপথ নেওয়ার পর গণমাধ্যমকে ড. কামাল হোসেন বলেন, যারা গরু-ছাগলের মতো বিক্রি হয়, তাদের নিয়ে তিনি কোনো কথা বলতে চান না। কিন্তু এম মোকাব্বির খান শপথ নেওয়ার পর ড. কামাল না দলের বৈঠক ডেকেছেন, না স্টিয়ারিং কমিটির বৈঠক ডেকেছেন।

তিনি বলেন, ‘সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ গ্রহণের শেষ সময় আগামী ৩০ এপ্রিল। এর মধ্যে বিএনপি তাদের ছয়জনের বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত নেয় তা দেখার জন্য হয়তো সময় নিচ্ছেন ড. কামাল হোসেন। কারণ বিএনপির নির্বাচিত এমপিরা চান সংসদে যোগ দিতে। সংসদে যোগ দেওয়ার বিনিময়ে দলটির কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে সামনে আনছে বিএনপি।’

ঐক্যফ্রন্টের আরেক নেতা নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বিস্ময় প্রকাশ করে জানান, সুলতান মনসুরের বেলায় এক দিনে সিদ্ধান্ত হলেও মোকাব্বির খানের বেলায় কেন বিলম্ব হচ্ছে তা তিনি বুঝতে পারছেন না।

গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু ঐক্যফ্রন্টের মিডিয়া প্রধান লতিফুল বারী হামিমের মাধ্যমে গত মঙ্গলবার গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, দলীয় ফোরামে আলোচনা করে মোকাব্বির খানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে গণফোরাম। আগামী ২০ এপ্রিল ওই বৈঠক হবে।

সাধারণত গণফোরামের বৈঠক ডাকেন দলের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু। বৈঠক কেন ২০ এপ্রিল ডাকা হলো সে বিষয়ে জানতে একাধিকবার তার মোবাইলে ফোন করেও সাড়া মেলেনি।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শাহ মোয়াজ্জেম হোসেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নাম উল্লেখ না করে বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না জেনেও কেন আমরা ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে থাকলাম? সরকার কোনো দাবি না মানার পরও কেন বিএনপি নির্বাচনে গেল? যদিও সবার দাবি ছিল নির্বাচনের আগে খালেদা জিয়ার মুক্তি। কেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আন্দোলনের নেতৃত্ব দিতে পারলেন না সে প্রশ্নও তোলেন তিনি। নির্বাচনের আগেও জোটের শীর্ষ নেতা হিসেবে কামাল হোসেনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বিএনপির এই ভাইস চেয়ারম্যানসহ অনেক নেতা।

একই অনুষ্ঠানে পরে ড. কামাল হোসেনের পক্ষ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল দাবি করেছিলেন, দলের কারাবন্দি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশে ও তার সম্মতিতেই সবকিছু করা হয়েছে। এ নিয়ে কোনো দ্বিমত থাকার কথা নয়।

সুলতান মনসুরের পর মোকাব্বির খানের শপথের প্রেক্ষাপটে জোটের শীর্ষ নেতা কামাল হোসেনের ভূমিকা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে সমালোচনায় সরব হয়েছেন বিএনপির ছাত্রসংগঠন ছাত্রদলের নেতারাও। মঙ্গলবার মোকাব্বির খান শপথ নেওয়ার পর হাসান মাহমুদ রিয়াদ নামে এক ছাত্রদল নেতা ফেসবুকে লিখেছেন ‘সারা দেশে এক আওয়াজ, ড. কামাল ধোঁকাবাজ।’