‘গণিতের নোবেল’ বিজয়ী প্রথম নারী যুক্তরাষ্ট্রের কারেন
আমাদের নারায়ণগঞ্জ
প্রকাশিত : ১২:৩৬ পিএম, ২৩ মার্চ ২০১৯ শনিবার

এখনও পুরুষশাসিত বিজ্ঞানের জগতে স্বীয় কৃতিত্বের জন্য সম্মানিত হলেন আরো একজন নারী। মার্কিন গণিতজ্ঞ কারেন উহ্লেনবেককে এ বছর ‘গনিতের নোবেল’ হিসেবে খ্যাত অ্যাবেল প্রাইজে ভূষিত করা হয়েছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি।
আবেল কমিটির চেয়ারম্যান হ্যান্স মুন্টে-কাস এক বিবৃতিতে জানান, কারেনের থিওরি আমাদেরকে সাবানের ফেনার মতো ক্ষুদ্র পৃষ্ঠতল সম্পর্কে জানতে সাহায্য করে এবং উচ্চতর মাত্রায় সাধারণ কিছু ক্ষুদ্রতর করার সমস্যাগুলো বুঝতে সাহায্য করে।
নরওয়ের একাডেমি অফ সায়েন্স অ্যান্ড লেটার্স মঙ্গলবার জানিয়েছে, ‘পদার্থবিজ্ঞান, গণিতশাস্ত্র ও বিশ্লেষণ (অ্যানালিসিস) এই তিনটি শাখার মধ্যে সেতু গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তার সারা জীবনের অবদানের জন্য এবার দেয়া হয়েছে অ্যাবেল প্রাইজ।’
এই পুরস্কারের অর্থ মূল্য ৬০ লাখ নরওয়েজিয় ক্রোনার। এই প্রথম কোনো নারীকে দেয়া হলো এতো বড় অঙ্কের পুরস্কার ও সেরা আন্তর্জাতিক সম্মান।
সামান্য একটা সাবানের ফেনা নিয়েই গবেষণা করেছিলেন কারেন। দৈর্ঘ্য, প্রস্থ আর উচ্চতায় তার সঙ্গে সময়কে যোগ করলে হয় চারমাত্রার (ডাইমেনশন) ব্রহ্মাণ্ড। কিন্তু তার বাইরেও ব্রহ্মাণ্ডের আরো মাত্রা রয়েছে। যাকে বলা হয় বহুমাত্রিক (মাল্টি-ডাইমেনশনাল) ব্রহ্মাণ্ড। চারমাত্রার ব্রহ্মাণ্ডে সাবানের ফেনার চেহারাটা কেমন হয়, দেখতে কেমন লাগে সেই ফেনাকে, তা তো আমরা জানি। কিন্তু সেই সাবানের ফেনার চেহারাটা কেমন হবে বহুমাত্রিক ব্রহ্মাণ্ডে, সেটা আগেভাগে বলে দেয়ার রাস্তাটা কারেনই প্রথম দেখিয়েছেন।
সমতলে সবচেয়ে কাছাকাছি থাকা দু’টি বিন্দুকে যোগ করা হয় একটি সরলরেখা দিয়ে। আর সেটা যদি পৃথিবীর উপর কোনো বিন্দু হয়, তাহলে সেই সরলরেখাটা আর সরলরেখা থাকবে না। হয়ে যাবে একটা বৃত্তের ব্যাস। এটা হয় দ্বিমাত্রিক (টু ডাইমেনশনাল) ক্ষেত্র। আর সাবানের ফেনা বা বুদবুদের ক্ষেত্রে সেটা ত্রিমাত্রিক (থ্রি ডাইমেনশনাল) হয়ে যায়। তখনই দেখা দেয় নানা রকমের জটিলতা। মাত্রাটা যত বাড়ে... চার, পাঁচ বা ছয়, ততই বেড়ে যায় জটিলতা। কারেনের কৃতিত্ব, তিনিই সেই জটিলতার জাল কেটেছিলেন অনায়াসে।
পৃষ্ঠটানের (সারফেস টেনশন) বলকে যতটা সম্ভব কম করতে সাবানের ফেনা বা বুদবুদ একটা গোলকের চেহারা নেয়। ফলে সাবানের ফেনাটি তার অস্তিত্ব বজায় রাখতে একটি নির্দিষ্ট আয়তনে সবচেয়ে কম জায়গা নিতে পারে। কিন্তু সেই সাবানের ফেনার গায়ে যখন চারপাশ থেকে আরো কয়েকটি সাবানের ফেনা এসে ধাক্কা মারে, তখনই ঘটে বিপত্তি। ধাক্কা খেয়ে প্রথম সাবানের ফেনাটির চেহারায় ব্যাপক অদলবদল ঘটে যায়। তার তখন কার্যত দিশেহারা অবস্থা হয়। হাঁসফাঁস করতে করতে তখনও কিন্তু সে তার অস্তিত্বের জন্য সামান্য জায়গাটুকুকেই ধরে রাখার চেষ্টা করে।
কারেন এটাই দেখিয়েছিলেন। তার দেখানো পথ ধরেই পরে কণাপদার্থবিজ্ঞানের স্ট্যান্ডার্ড মডেলের ভিত গড়ে ওঠে। আর এইভাবেই জ্যামিতি, বিশ্লেষণ আর কণাপদার্থবিজ্ঞানের মধ্যে সেতু গড়ে তুলেছিলেন কারেন।